আবরাহার হস্তি বাহিনী যেভাবে ধ্বংস হলো

how-abrahars-elephant-army-was-destroyed




আবরাহা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করার জন্য অগ্রসর হলো। সে তার ‘মাহমুদ’ নামীয় হাতিটি সামনে চালানোর জন্য প্রস্তুত করলো। তখন নুফায়েল ইবনে হাবিব, যাকে আবরাহা রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছিল, সে এই সময় সামনে অগ্রসর হয়ে উক্ত হাতির কান ধরে বললো, তুমি যেখান থেকে এসেছো, সেখানেই সহীহ-সালামতে ফিরে যাও। 


কেননা, তুমি আল্লাহ তা‘আলার নিরাপদ শহরে (بَلَد امِيْن) অবস্থান করছো। এই বলে সে হাতির কান ছেড়ে দিল। এটা শোনামাত্র উক্ত হাতি বসে পড়লো।হাতির মাহুতরা অনেক চেষ্টা করে তাকে উঠিয়ে সামনে অগ্রসর করাতে চাইলো। কিন্তু কি আশ্চর্য, সে উঠলো না। 


এমনকি হাতিটিকে খুব প্রহার হলো, বড় বড় চাবুক দিয়ে আঘাত করা হলো এবং আঘাত করতে করতে তাকে আহত করা হলো। আবার হস্তিটির নাকে লোহার আংটা লাগিয়ে তাকে উঠানোর চেষ্টা করা হলো। কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও সে এক বিন্দুও সামনে বাড়লো না।


আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেই হাতিটি যখন বিপরীত দিকে অর্থাৎ উত্তর, দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে চালানোর চেষ্টা করা হতো, তখন সে দৌড় শুরু করতো। পক্ষান্তরে মক্কার দিকে ফিরিয়ে চালানোর চেষ্টা করা হলে, সাথে সাথে বসে পড়তো। তখন কোনক্রমেই সম্মুখের দিকে চালানো সম্ভব হতো না।


এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এলো। প্রত্যেকটি পাখির মুখে একটি ও দুই পায়ে দুটি করে পাথর ছিল। ওয়াকিদী রহ. বর্ণনা করেন, পাখিগুলো এত আশ্চর্য ধরনের ছিল, ইতোপূর্বে কখনোই ঐ ধরনের পাখি দেখা যায়নি। 


সেগুলো আকৃতিতে কবুতরের চেয়ে একটু ছোট, লাল পাঞ্জাযুক্ত ছিল। এদের প্রত্যেক পাঞ্জা ও মুখে একটি করে কাঁকর-পাথর ছিল। পাখিগুলো হঠাৎ করে এসে আবরাহার সৈন্যদের মাথার উপর শূন্যে অবস্থান গ্রহণ করলো এবং গোটা বাহিনীর উপর পাথরকুচির বৃষ্টি বর্ষণ শুরু করলো। 


এই কংকর যার শরীরে পড়লো, সাথে সাথে তার শরীর বিগলিত হয়ে মাটিতে প্রবিষ্ট হয়ে গেল। এই ভয়ানক শাস্তি দেখে সমস্ত হাতি দৌড়ে পালিয়ে গেল। কেবল একটি হাতি সেখানে থেকে গিয়েছিল। সেটাও কংকরের আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেল। সকল সেনাসদস্য ঐ স্থানে ধ্বংস হয়নি, বরং তাদের অনেকে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলে, রাস্তায়ই মরতে থাকে এবং জমিনে লুটিয়ে পড়তে থাকে।


আবরাহার মাহমুদ নামক হাতির দুইজন চালক মক্কা মুকাররমায় রয়ে গিয়েছিল। তারা অন্ধ ও বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমার বড় বোন হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমি ঐ ল্যাংড়া দুটোকে ভিক্ষা করতে দেখেছি।


আল্লাহ তা‘আলা আবরাহা বাহিনীকে যে পাখির মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন, কুরআনে কারীম সে ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে,

وَارْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا ابَابِيْلَ
তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। (সূরা ফীল, আয়াত:৪)


এখানে উল্লিখিত ابَابِيْلَ শব্দটি বহুবচন। কিন্তু আরবী ভাষায় এর কোন এক বচনের ব্যবহার পাওয়া যায় না। এর অর্থ পাখির ঝাঁক। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে ‘আবাবীল’ কোন পাখির নাম নয়, বরং এ শব্দ দ্বারা সেই পাখির আধিক্য বুঝানো হয়েছে। এই পাখির আকারে কবুতর অপেক্ষা একটু ছোট ছিল। 


কিন্তু এ জাতীয় পাখি এর পূর্বে কখনোই দেখা যায়নি। (আহকামুল কুরআন) হস্তিবাহিনীর উপর যে কংকর নিক্ষিপ্ত হয়েছিল কুরআনে কারীমে সে ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ (পাথরজাতীয় কংকর দ্বারা।) ভেজা মাটি আগুনে পুড়িয়ে যে কংকর তৈরি করা হয়, সে কংকরকে سِجِّيْلٍ বলা হয়। 

এতে ইঙ্গিত রয়েছে, এই কংকর কেবল সাধারণ মাটি ও আগুনের তৈরি ছিল, যার নিজস্ব কোন বিশেষ শক্তি ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কুদরতে ঐ কংকর রাইফেলের গুলির চেয়ে বেশি কাজ করেছিল। 


No comments

Powered by Blogger.