কেয়ামতের সাতটি বড় আলামত

seven-major-signs-doomsday



কেউ বিশ্বাস করুন আর নাই করুন কেয়ামত অতি সন্নিকটে। এতো মধ্যে কেয়ামতের ছোট ছোট অনেক গুলো আলামত প্রকাশ পেয়েছে। আপনার দেশ এবং সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কি হচ্ছে এসব। কেয়ামতের সাতটি বড় বড় আলামত প্রকাশ ফেলেই সংগঠিত হয়ে যাবে।

হযরত ইসরাফিল আ. সিঙ্গা হাতে নিয়ে অধীর অপেক্ষায় চেয়ে আছে কখন আল্লাহ তাআলার আদেশ আসবে, আর তিনি সিঙ্গায় ফু দেবেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো কেয়ামতের সাতটি বড় বড় আলামত নিয়ে, অনেকেই হয়তো জানেন, কিন্তু আপনিও পড়ে দেখতে পারেন। 


১. ইমাম মাহদী রহ. এর আগমন 
কিয়ামতের ছোট বড় আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর পরিশেষে এমন একটি সময় আসবে, যখন কাফির-মুশরিকদের প্রভাব খুব বেশি হবে। চতুর্দিকে খ্রিস্টানদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। খায়বার নামক স্থান পর্যন্ত খ্রিষ্টানদের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন দুর্দশার সময় মুসলমানগণ তাদের বাদশাহ বানানোর জন্য হযরত মাহদীকে তালাশ করতে থাকবে।


এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক সৎলোক মক্কায় বাইতুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ রত অবস্থায় হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে পেয়ে তাকে চিনে ফেলবেন। এবং তাঁর হাতে বাইয়াত হয়ে তাকে খলীফা নিযুক্ত করবেন। এ সময় তাঁর বয়স হবে চল্লিশ বছর। ঐ সময় একটি গায়েবি আওয়াজ আসবে ইনিই আল্লাহর খলীফা -মাহদী।


হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ। তাঁর পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ । তিনি হযরত ফাতিমা রাযি. এর বংশোদ্ভূত অর্থাৎ সায়্যিদ বংশীয় লোক হবেন। মদীনা তাঁর অবস্থান হবে। তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে হিজরত করবেন। তাঁর দৈহিক গঠন ও আখলাক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুরূপ হবে। তিনি নবী হবেন না, তাঁর ওপর ওহীও অবতীর্ণ হবে না। 


তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন এবং আধিপত্য বিস্তারকারী খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ পরিচালনা করবেন এবং তাদের দখল থেকে শাম, কনষ্টান্টিনোপল [বর্তমান ইস্তাম্বুল] প্রভৃতি  অঞ্চল জয় করবেন। তাঁর আমলে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। এবং তার আমলেই হযরত ঈসা আ. অবতরণ করবেন। হযরত ঈসা আ. এর আগমনের কিছুকাল পরে তিনি ইনতিকাল করবেন।

২. দাজ্জাল'এর আবির্ভাব 
দাজ্জাল শব্দের অর্থ প্রতারক, ধোঁকাবাজ। এটি কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। আল্লাহ তা‘আলা শেষ জামানায় লোকদের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য একজন লোককে প্রচুর ক্ষমতা প্রদান করবেন। তার এক চোখ টেরা  থাকবে, চুল কোঁকড়া ও লাল বর্ণের হবে। সে খাটো দেহের অধিকারী হবে। তার কপালে লেখা থাকবে ‘কাফির’, সকল মু‘মিন সে লেখা পড়তে পারবে, ইরাক ও শাম দেশের মাঝখানে তার অভ্যুত্থান হবে। 


সে ইহুদি বংশোদ্ভূত হবে। প্রথমে সে নবুওয়তের দাবি করবে। তারপর ইস্পাহানে যাবে, সেখানে ৭০ হাজার ইহুদি তার অনুগামী হবে। তখন সে খোদায়ী দাবি করবে। লোকেরা চাইলে সে বৃষ্টি বর্ষণ করে দেখাবে, মৃতকে জীবিত করে দেখাবে, কৃত্রিম বেহেশত দোযখ তার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বেহেশত হবে দোযখ আর তার দোযখ হবে বেহেশত। সে আরো অনেক অলৌকিক কাণ্ড দেখাতে পারবে। যা দেখে কাঁচা ঈমানের লোকেরা তার দলভুক্ত হয়ে জাহান্নামী হয়ে যাবে। 


এক ভীষণ ফেতনা ও ভীষণ পরীক্ষা হবে সেটা। দাজ্জাল একটা গাধার উপর সওয়ার হয়ে ঝড়ের বেগে সমগ্র ভূ-খণ্ডে বিচরণ করবে এবং মক্কা, মদীনা এবং বাইতুল মুকাদ্দাস ব্যতীত [এসব এলাকায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। ফেরেশতাগণ এসব এলাকার  পাহারায় থাকবেন।] সব স্থানে ফিতনা বিস্তার করবে। হযরত মাহদীর সময় তা আবির্ভাব হবে। সে সময় হযরত ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। এবং তারই হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। অভ্যুত্থানের পর দাজ্জাল সর্বমোট ৪০ দিন দুনিয়াতে থাকবে। 


৩. হযরত ঈসা আ. এর দুনিয়াতে অবতরণ
দাজ্জাল ও তার বাহিনী বাইতুল মুক্কাদ্দাসের চারদিকে ঘিরে ফেলবে। মুসলমানগণ আবদ্ধ হয়ে পড়বে। ইত্যবসরে একদিন ফজরের নামাযের ইকামত হওয়ার পর হযরত ঈসা আ. আকাশ থেকে ফেরেশতাদের ওপর ভর করে অবতরণ করবেন। বাইতুল মুক্কাদ্দাসের পূর্বদিকের মিনারার নিকট তিনি অবতরণ করবেন। 

হযরত মাহদী এই নামাযের ইমামতি  করবেন। নামাযের পর হযরত ঈসা আ. হাতে ছোট একটি বর্শা নিয়ে বের হবেন। তাঁকে দেখেই দাজ্জাল পলায়ন করতে আরম্ভ করবে। হযরত ঈসা আ. তার পেছনে ছুটবেন এবং বাবে লুত নামক জায়গায় গিয়ে তাকে নাগালে পেয়ে বর্শার আঘাতে বধ করবেন। মুসলমানদের আক্বীদা অনুযায়ী হযরত ঈসা আ. কে আল্লাহ তা‘আলা সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। 


কিংবা ইহুদিরা তাকে শূলীতে চড়িয়েও হত্যা করতে পারেন নি। তিনি আকাশে জীবিত আছেন। তাঁকে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযা মুবারকের পাশেই দাফন করা হবে। হযরত ঈসা আ. তখন নবী হিসাবে আগমন করবেন না। বরং তিনি আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে এই দুনিয়াতে আগমন করবেন। এবং এই শরী‘আত অনুযায়ী তিনি জীবন-যাপন ও খেলাফত পরিচালনা করবেন।


৪. দাব্বাতুল আরদ'এর আক্রমণ 
পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়ের কিছুদিন পর মক্কা শরীফের সাফা পাহাড় ফেটে অদ্ভুত আকৃতির এক জানোয়ার  বের হবে। একে বলা হয় দাব্বাতুল আরদ [ভূমির জন্তু]। এটিও কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। এই প্রাণীটি মানুষের সাথে মানুষের ভাষায় কথা বলবে। সে অতি দ্রুত বেগে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে। সে মু‘মিনদের কপালে একটি নূরানি রেখা টেনে দিবে। 

ফলে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যাবে। এবং বেঈমানদের নাকের অথবা গর্দানের উপর সীল মেরে দিবে। ফলে তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। সে প্রত্যেক মু‘মিন ও কাফিরকে চিনতে পারবে। এই জন্তুর আবির্ভাব কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত সমূহের অন্যতম। এই জন্তুটির আকার আকৃতি সম্পর্কে ইবনে কাছীরে বিভিন্ন বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। এসবের অধিকাংশই নির্ভরযোগ্য নয়।


৫. আকাশের এক ধরণের ধোঁয়া বের হবে
হযরত ঈসা আ. এর ইনতিকালের পর কয়েকজন নেককার লোক ন্যায়পরায়ণতার সাথে রাজত্ব পরিচালনা করবেন। তারপর ক্রমান্বয়ে দ্বীনদারী কমে যাবে। চারিদিকে বেদ্বীনি শুরু হয়ে যাবে। এরই মাঝে এক সময় আকাশ থেকে একধরণের ধোঁয়া আসবে। যার ফলে মু‘মিন মুসলমানদের সর্দির মতো ভাব হবে। আর কাফিররা বেহুঁশ হয়ে যাবে। ৪০ দিন পর ধোঁয়া পরিষ্কার হবে।


৬. ইয়াজুজ মা’জুজ'এর ফিতনা 
দাজ্জালের ফিতনা ও তার মৃত্যুর পর আসবে ইয়াজুজ মাজুজের ফিতনা। এটাও কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত। ইয়াজুজ মাজুজ অত্যন্ত অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মানুষগোষ্ঠী। তাদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হবে।  তারা দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। ভীষণ উৎপাত শুরু করবে। তারা সর্বত্র হত্যা এবং লুটতরাজ  চালাতে থাকবে। [তারা বর্তমানে কোন দেশের কোথায় কী অবস্থায় অবস্থিত, কী তাদের বর্তমান পরিচয় তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। 

এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসেও স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তাদের রাজত্ব ও উৎপাত চলাকালে হযরত ঈসা আ. এবং তার সঙ্গীরা আল্লাহর হুকুমে তূর পর্বতে আশ্রয় নিবেন। হযরত ঈসা আ. ও মুসলমানরা তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা মহামারীর আকারে রোগ-ব্যাধি প্রেরণ করবেন। বর্ণিত আছে-সেই রোগের ফলে তাদের ঘাড়ে এক ধরণের পোকা সৃষ্টি হবে। ফলে অল্প সময়ের মাঝেই ইয়াজুজ-মা’জুজের গোষ্ঠী সকলেই মরে যাবে। তাদের অসংখ্য মৃতদেহের পচা দুর্গন্ধ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। 

তখন হযরত ঈসা আ. এবং তার সঙ্গীদের দু‘আয় আল্লাহ তা‘আলা একধরণের বিরাটকার পাখী প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মতো। তারা মৃতদেহগুলো উঠিয়ে নিয়ে সাগরে বা যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা সেখানে ফেলে দিবে। তারপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এবং সমস্ত ভূপৃষ্ঠ বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।


৭. পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হবে 
এর কিছু দিন পর একদিন হঠাৎ একটি রাত তিন রাতের পরিমাণ লম্বা হবে। মানুষ ঘুমাতে ঘুমাতে ত্যাক্ত হয়ে যাবে। গবাদি পশু বাইরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাবে এবং চিৎকার শুরু করবে। তারপর সূর্য সামান্য আলো নিয়ে পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে। তখন থেকে আর কারো ঈমান বা তাওবা কবুল হবে না। তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। 

এর পূর্ব পর্যন্ত খোলা থাকবে। সূর্য মধ্য আকাশ পর্যন্ত এসে আল্লাহর হুকুমে আবার পশ্চিম দিকে গিয়েই অস্ত যাবে। তারপর আবার যথারীতি কিছুদিন পূর্বের নিয়ম মাফিক পূর্বদিক থেকে উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে অস্ত যেতে থাকবে। এবং পরিশেষে অস্ত হয়ে যাবে।


কিয়ামতের পূর্বক্ষণে দুনিয়ার অবস্থা ও কিয়ামত সংঘটন
দাব্বাতুল আরদ গায়েব হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে একটি আরামদায়ক বায়ু প্রবাহিত হবে। তাতে ঈমানদারগণের বগলে কিছু অসুখ হবে এবং তারা খুব সহজেই মারা যাবে। দুনিয়ায় কোনো ঈমানদার ব্যক্তি ও আল্লাহ আল্লাহ করার বা আল্লাহর নাম নেওয়ার মতো কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। 

সারা দুনিয়ায় হাবশী কাফিরদের একসঙ্গে রাজত্ব চলবে। তারা বাইতুল্লাহ শরীফ ধ্বংস করে ফেলবে। কুরআন শরীফ মানুষের অন্তর থেকে এবং কাগজ থেকে উঠে যাবে। তারপর হঠাৎ একদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। এবং তখনই কিয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে। সিঙ্গার ফুঁকে প্রথম প্রথম হালকা আওয়াজ হবে। পরে এত বিকট ও ভীষণ হবে যে, সারা দুনিয়ার সমস্ত লোক মারা যাবে। আসমান ও জমিন ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। পূর্বে যারা মারা গেছে তাদের রুহুও বেহুঁশ হয়ে যাবে। সর্বশেষ সারা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।


No comments

Powered by Blogger.