মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়া

belief-resurrection-after-death



মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদের বর্তমান জীবন পরীক্ষার নিমিত্ত। মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করে এ জীবনের সকল বিষয়ের হিসাব নিবেন। 


মৃত্যুর পর রয়েছে কবরে সাময়িক ফলভোগের বরযখী যিন্দেগী, আর পরবর্তীতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর আসবে পরকালীন আসল যিন্দেগী। পূর্ণাঙ্গ হিসাব-কিতাবের পর বান্দার জন্যে নির্ণীত হবে বেহেশত বা দোযখের সেই অনন্ত যিন্দেগী। যার কোনো শেষ নেই। 


কিয়ামতের পূর্বেই মুনকার-নাকীরের প্রশ্নোত্তরের পর কবরের ভিতরে নেককার মানুষদের জন্যে শান্তি ও আরামের ব্যবস্থা করা হয় এবং বদকার পাপীদের জন্যে আযাব শুরু হয়ে যায়। তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত চলবে। 


আলমে বরযখ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের যিন্দেগীর মধ্যবর্তী যিন্দেগী। সকল মানুষ ইনতিকালের পর সেখানেই পৌঁছে যায়, তাই তাকে কবর দেয়া হোক বা না-ই হোক। যেমন-অনেককে বাঘ বা কোন হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলে, কতেককে আগুনে জ্বালানো হয়, তারাও সেখানে উপস্থিত হয়। কবর বলে মূলত এই জগতকেই বোঝানো হয়। 


নেক লোকদের জন্যে কবর জান্নাত বা বেহেশতের একটা অংশ হয়ে যায়। তারা সেখানে আরামের সাথে অবস্থান করতে থাকে। মৃত ব্যক্তির জন্যে দু‘আ করলে বা কিছু সদকা করলে, সে তা পেয়ে খুশি হয় এবং তাতে তার বড়ই উপকার হয়।


ইসলামের আক্বীদা সমূহ গুলোকে যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে, মুখে স্বীকার করবে এবং এগুলোর দাবী অনুযায়ী আমলে সালিহা করবে, কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে তাকে বলা হবে পরিপূর্ণ মু‘মিন ও মুসলিম। 


আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা যে, তাকে দুনিয়াতে, বরযখে ও আখিরাতে ইজ্জত ও শান্তির সাথে রাখবেন এবং তাকে সকল প্রকার আযাব-গযব ও কষ্ট-পেরেশানি থেকে হিফাযত করবেন। কিয়ামতের দিন দোযখ থেকে হিফাযত করে তাকে আল্লাহর পূর্ণ সন্তুষ্টির সংবাদসহ মহাসুখের আবাস ও আনন্দের জান্নাত দান করবেন।


আর যে ব্যক্তি উল্লেখিত কথাগুলোর সবগুলো মনে-প্রাণে বিশ্বাস তো করে, কিন্তু অলসতা বা গাফলতির কারণে কথাগুলোর দাবির ওপর আমল করে না বা আংশিকভাবে আমল করে, তাকে শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফাসিক বা গুনাহগার মু‘মিন বলা হয়। 


তার গুনাহসমূহকে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মাফ করতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে তাকে আযাব ও দিতে পারেন। তবে সে ব্যক্তি তার ঈমানের বদৌলতে অবশ্যই জান্নাতে যাবে; সরাসরিও যেতে পারে, অথবা তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পরে জান্নাতে যেতে পারে।


 কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত বিষয়সমূহকে অবিশ্বাস করবে, অথবা এগুলো থেকে মাত্র কোন একটি বিষয়কে অবিশ্বাস করবে কিংবা তাতে সন্দেহ পোষণ করবে, অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে, কিংবা এগুলোর মধ্যে কোন দোষ বের করবে, তার ঈমান থাকবে না। 


বরং সে কাফের বলে গণ্য হবে। আর যদি পূর্ব থেকে মুসলমান থেকে থাকে, তারপরে তার থেকে এ ধরনের অপরাধ প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে মুরতাদ (দ্বীন ত্যাগকারী) বলা হবে, যদিও সে মুসলমান হওয়ার দাবি করে এবং যদিও সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা‘আতের সাথে পড়ে, মাথায় টুপি ও মুখে দাড়ি রাখে রাখে বা হজ্ব-উমরা পালন করে। 


এসব আমল পরকালে তার কোন কাজে আসবে না। কারণ এ কাজগুলো নেক আমল। আর কেউ নেক আমল করলেই সে মু‘মিন গণ্য হয় না। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যামানায় অনেক মুনাফিক অর্থাৎ নিকৃষ্ট কাফির ছিল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে সকল নেক কাজে অংশ গ্রহণ করতো। 


এমনকি জিহাদেও শরীক হতো। তারপরও তারা মু‘মিন বলে গণ্য হয়নি। বস্তুত ঈমান ভিন্ন জিনিস এবং আমল ভিন্ন জিনিস। সহীহ ঈমানের সাথে আমল দুনিয়া ও আখিরাতের ফায়দা পৌঁছায়। আর আমল ব্যতীত শুধু ঈমানও ফায়দা দেয় না। কারণ, এমন ঈমানদার, যার নিকট নেক আমল নেই, সেও কোন এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। 


No comments

Powered by Blogger.