কিয়ামতের আলামত, লক্ষণ এবং ক্ষণ
ইসলামের আক্বীদা সমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে কিয়ামতের দিবসের উপর বিশ্বাস করা। কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান আনা বা বিশ্বাস করার অর্থ হলো, কুরআন ও হাদীসে কিয়ামতের যতগুলো নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে, তা নিশ্চয়ই ঘটবে দৃঢ় ভাবে এ কথা বিশ্বাস করা। কেয়ামতের আলামত দুই ধরনের হবে, একটি হলো ছোট ছোট আলামত আরেকটি হলো বড় আলামত।
আলেম ওলামাদের মতে কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের মধ্যে অনেক গুলো আলামত এতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে, আর বড় বড় আলামত গুলো পূর্ণ হলেই কেয়ামত অনুষ্টিত হবে। কেয়ামতের বড় আলামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলামত গুলো হচ্ছে যেমন- বিশ্বাস করা যে,
১. ইমাম মাহদী রহ. আবির্ভূত হবেন। তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতার সাথে বাদশাহী করবেন।
২. ‘কানা দাজ্জাল’ অনেক অনেক ফিতনা-ফাসাদ করবে, তাকে খতম করার জন্য হযরত ঈসা আ. আসমান থেকে অবতীর্ণ হবেন এবং তাকে বধ করবেন।
৩. ‘ইয়াজুজ মা’জুজ’ অতিশক্তিশালী পথভ্রষ্ট শ্রেণীর মানুষ। তারা দুনিয়াতে ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে দেবে। অতঃপর আল্লাহর গযবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ৪. ‘দাব্বাতুল আরদ’ নামে এক আশ্চর্য জানোয়ার পৃথিবীতে জাহির হবে এবং মানুষের সাথে কথা বলবে।
৫. কিয়ামতের পূর্বে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে,
৬. তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং
৭. কুরআন শরীফ উঠে যাবে।
এধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটবে। তারপরে কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত মু‘মিনগণ মারা যাবেন, সমস্ত দুনিয়া কাফিরদের দ্বারা ভরে যাবে, তাদের উপরেই কিয়ামত কায়িম হবে। কিয়ামতের সকল নিদর্শন যখন পূর্ণ হবে, তখনই আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসরাফীল আ. শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন।
তাতে কতিপয় জিনিস ব্যতীত সব ধ্বংস হয়ে যাবে, আসমান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সমস্ত জীবজন্তু মরে যাবে, যারা পূর্বে মারা গেছে, তাদের রুহ বেঁহুশ হয়ে যাবে। অনেক দিন এ অবস্থায় অতিবাহিত হবে। আল্লাহর নির্দেশে তারপর আবার-শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে।
তাতে সমস্ত আলম আবার জীবিত হয়ে উঠবে এবং কেয়ামতের ময়দানে সকলে একত্রিত হবে। কিয়ামতের দিন সূর্য অতি নিকটে চলে আসবে। ফলে মানুষের খুব কষ্ট হবে। কষ্ট দূর করার জন্য লোকেরা হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে বড় বড় নবীগণের আ. নিকট সুপারিশের জন্য যাবে।
কিন্তু কেউ সুপারিশ করার সাহস পাবে না। অবশেষে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফাআতে হিসাব-নিকাশ শুরু হবে। মীযানের মাধ্যমে নেকী-বদীর হিসাব হবে। অনেকে বিনা হিসেবেই বেহেশতে চলে যাবে, অনেককে বিনা হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
হিসাবের পর নেককারদের ডান হাতে এবং বদকারদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে। জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকে পার হতে হবে। নেককার লোকেরা দ্রুত পার হয়ে যাবেন, কিন্তু বদকার লোকেরা পার হওয়ার সময় পুলসিরাতের নিচে অবস্থিত দোযখে পড়ে যাবে।
সেই কঠিন দিনে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতদেরকে হাউজে কাউসারের শরবত পান করাবেন। তা এমন তৃপ্তিকর হবে, যা পান করার পর পিপাসার নামমাত্র থাকবে না। জাহান্নামে ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডসহ বিভিন্ন রকম শাস্তির উপকরণ মহান আল্লাহ পূর্ব হতেই সৃষ্টি করে রেখেছেন।
যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান আছে, সে যত বড় পাপী হোক না কেন, পাপের শাস্তি ভোগ করার পর নবীগণের বা অন্যদের সুপারিশে মুক্তি লাভ করে কোন এক সময় বেহেশতে প্রবেশ করবে। যারা কুফরী করেছে, শিরকী করেছে, তারা যদি দুনিয়াতে ভাল কাজও করে থাকে, তারা কিছুতেই মুক্তি পাবে না।
দোযখীদের কখনো মৃত্যুও আসবে না। তারা চিরকাল শাস্তিই ভোগ করতে থাকবে এবং তাদের কোন আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হবে না। দোযখের ন্যায় বেহেশতকেও আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব হতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেখানে নেক লোকদের জন্যে অগণিত ও অকল্পনীয় শান্তির সামগ্রী ও নেয়ামত মওজুদ আছে।
যে একবার বেহেশতে যাবে, তার আর কোন ভয় বা ভাবনা থাকবে না। এবং কোনদিন তাকে বেহেশত থেকে বের হতে হবে না। বরং চিরকাল সেখানে জীবিত অবস্থায় থেকে সুখ-শান্তি ভোগ করতে থাকবে। বেহেশতের সকল নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট নেয়ামত।
যদিও দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু মু‘মিনগণ বেহেশতের মধ্যে আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হবেন। বেহেশতের মধ্যে বাগ-বাগিচা, বালাখানা, হুর-গিলমান, বিভিন্ন রকম নহর ও নানারকম অকল্পনীয় সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী সর্বদা মওজুদ থাকবে।
জান্নাতীদের অন্তরে কোন নেয়ামত ভোগ করার ইচ্ছা হওয়ার সাথে সাথে তা পূর্ণ হবে। দুনিয়াতে কাউকে নিশ্চিতভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যায় না। অবশ্য কুরআন-হাদীসে যাদের নাম নিয়ে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে বলা যাবে। তবে কারোর ভাল আমল বা ভাল আখলাক দেখে তাকে ভাল মনে করা উচিত।
No comments