খাওয়া এবং পান করার সুন্নাত সমূহ

খাওয়া এবং পান করার সুন্নাত সমূহ



খাওয়া এবং পান করা মানুষসহ সকল প্রাণী কুলের একটি অবশ্যকীয় কাজ, যা বেঁচে থাকার জন্য করতেই হবে। তবে মানুষের খাওয়া পান করার উপাদান এবং ধরন অন্যান্য প্রাণীদের থেকে একেবারেই আলাদা। তাই সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের রয়েছে আলাদা চাহিদা,আর ধর্মীয় দিক থেকে রয়েছে আলাদা নিয়ম কানুন এবং রিতি রেওয়াজ। 

মানুষ হিসেবে আপনি চাইলেই যেনতেন ভাবে খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন না। আপনার আদব কায়দা, আপনার রিতি রেওয়াজ আপনাকে অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। তাই পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে, শালীনতা বজায় রাখতে হবে। মহা নবীর আদর্শ সামনে রেখে চলতে হবে। 


মহা নবীর প্রতিটি আর্দশে রয়েছে কল্যাণ এবং মঙ্গল। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজেই রয়েছে মহা নবীর দেখানো পথ এবং পদ্ধতি। চলুন তাহলে আজকে জেনে নিই মহা নবীর দেখানো খাওয়া পান করার সুন্নাত সমূহ। 


✓✓ খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ 

১. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে। আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৬১
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৮৬
ক, প্রথমে খানা তথা আল্লাহর নেয়ামতের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসা, তারপর দস্তরখানা বিছানো। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৮৫, ৫৩৯৯)
খ, দস্তরখানা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এর উপর ঝুটা (উচ্ছিষ্ট খাবার) হাড্ডি ইত্যাদি না ফেলা বা তাতে পা না রাখা উচিত। মুসলিম হাদীস নং- ২০৩৩

৩. (উঁচু স্বরে) বিসমিল্লাহ পড়া। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৭৬
৪. ডান হাত দিয়ে খাওয়া। বুখারী, হাদীস নং- ৫৩৭৬/ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২০
৫. খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযুর্গ, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো। মুসলিম, হাদীস নং- ২০১৭

৬. খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া। বুখারী, হাদীস নং- ৫৩৭৬
৭. খানার সময় তিনভাবে বসা যায়।
৮. হেলান দিয়ে বসে বসে না খাওয়া। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৯৮


৯. খাদ্য গ্রহণ করার সময় খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। যেমনই হয় খেয়ে নাওয়া সুন্নাত। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৪০৯
১০. খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া।মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৩
১১. খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। তাই খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভালো কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৭৬

১২. জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া সুন্নাত। মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং- ৭১২৯, খানা খাওয়ার সময় তিন পদ্ধতিতে বসে খাওয়া সুন্নত, নিচের যে কোনো এক পদ্ধতি গ্রহণ করলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে, যথাক্রমে;
ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে। মুসলিম, হাদীস নং- ২০৪৪
খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। শরহুস্ সুন্নাহ, হাদীস নং- ৩৫৭৭
গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৭৩। উযরের কারণে আসন দিয়ে বসারও অনুমতি আছে। সূরা নূর, আয়াত-৬১/ আল ইতহাফ, ৫ : ৪৮০

১৩. আহার গ্রহণ শেষে খানার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্রসমূহ আহারকারীর জন্য মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে দু‘আ করে। মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৩

১৪. খানা শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৩২৯৫
১৫. খানা শেষে এই দু‘আ পড়া, আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৫০

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِيْنَ.

১৬. দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খানা উঠানোর সময় এই দু‘আ পড়া, বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৪৫৮

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِىٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا.


১৭. খানা খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮৪৬
১৮. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৪৫৫
১৯. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়ার পর খানার মাঝে এই দু‘আ পড়া, আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৬৭

بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ

✓✓ পান করার সুন্নাত সমূহ

১. পানির পেয়ালা ডান হাত দিয়ে ধরা। মুসলিম, হাদীস নং- ২০২০
২. বসে পান করা, বসতে অসুবিধা না হলে দাঁড়িয়ে পান না করা। মুসলিম, হাদীস নং- ২০২৪
৩. বিসমিল্লাহ বলে পান করা এবং পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলা। তাবরানী আওসাতা, হাদীস নং- ৬৪৫২

৪. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র মুখ হতে সরিয়ে নেওয়া। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬৩১
৫. পাত্রের ভাঙ্গা দিক দিয়ে পান না করা। আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭২২
৬. পাত্র যদি এমন হয়, যার ভিতর নজরে আসে না, সেটার মুখে মুখ লাগিয়ে পান না করা। কারণ, তাতে কোন বিষাক্ত প্রাণী ক্ষতি সাধন করতে পারে। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬২৬

৭. পানি পান করার পর এই দু‘আ পড়া :

اَ لْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ سَقَانَا مَاءً عَذْبًا فُرَا تًا بِرَحْمَتِه وَلَمْ يَجْعَلْهٗ مِلْحًا اُجَاجًا بِذُنُوْبِنَا

৮. পানীয় দ্রব্য পান করে কাউকে দিতে হলে ডান দিকের ব্যক্তিকে আগে দেয়া এবং এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই শেষ করা। বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬১৯
৯. উযু করার পর যে পাত্রে হাত দিয়ে পানি নেয়া হয়, সে পাত্রের অবশিষ্ট পানি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা। এতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ হয়। শামী, ১ : ১২৯/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬১৬

১০. দুধ পান করার পূর্বে এই দু‘আ পড়া, আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৩০, দুধ ব্যতীত অন্য কোন পানীয় দ্রব্য হলে وَزِدْنَا এর পরে خَيْرًا  বৃদ্ধি করা। আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, ১২৭

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ.


১১. যে ব্যক্তি পান করাবে তার সর্বশেষে পান করা।  মুসলিম, হাদীস নং- ৬৮১
১২. যমযমের পানি কিবলামুখী হয়ে এ দু‘আ পড়ে পান করা :

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ.

(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং- ৯১১২/ সুনানে দারাকুতনী,  হাদীস নং- ২৭১২)



No comments

Powered by Blogger.