মুমূর্ষু রোগীর জন্য করণীয় এবং শরিয়তের বিধান

dos-shariah-provisions-dementedp-patient



অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাওয়া, রোগীর খোঁজখবর নেওয়া, রোগীকে শান্তনা দেওয়া মহা নবীর সুন্নাত। সামাজিক কাজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কাজ। যখন আপনি একজন রোগীকে দেখতে যাবেন, এক্ষেত্রে আপনার কিছু করণীয় কাজ থাকে, যে কাজগুলো অবশ্যই করা উচিত।

কিন্তু আমরা সেই কাজ গুলোই ভুলেই যাই। আর যা করণীয় নয় তাতে লিপ্ত হয়ে পড়ি, যার ফলে মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়ে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে করণীয় কাজগুলো জানা নিতান্তই জরুরী। মৃত্যুরোগীর ব্যাপারে অন্যদের করণীয় কাজগুলো আজ আলোচনা করবো, একটু সময় নিয়ে পড়তে থাকুন, উপকারেই আসবে। 

১. সুন্নাত হিসাবে রোগীর চিকিৎসা সাধ্যমত চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ভরসা আল্লাহ তা‘আলার উপর‌ই রাখতে হবে, ঔষধের উপর নয়। ঔষধের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ, তিনি চাইলেই শেফা হবে। আবুদাউদ শরীফ-হাদীস ৩৮৫৫


২. রোগীর ওযূ-নামাযের ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখতে হবে। হুশ-জ্ঞান ঠিক থাকা পর্যন্ত তাকে সব কাজে সহযোগিতা করতে হবে। সতর খোলা থাকতে দিবেন না।চিকিৎসার প্রয়োজনে যতটুকু না দেখলেই নয় ততটুকুই।

৩. মৃত্যুরোগীর আত্মীয়রা রোগীকে দেখতে যাবে। কেউ রোগীকে সকালে দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে দো‘আ করতে থাকে। ইবনে মাজাহ শরীফ-হাদীস নং ১৪৪২, মুসনাদে আহমদ-হাদীস নং ৬১৪,
রোগীকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিমোক্ত দু‘আ সাতবার পড়বে-

اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَنْ يَّشْفِيَكَ
যদি ঐ রোগেই তার মৃত্যুর ফয়সালা না হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে উক্ত দু‘আর ওসীলায় দ্রুত সুস্থ করে দিবেন। আবু দাউদ শরীফ-হাদীস নং ৩১০৬


৪. রোগী দেখতে গেলে তাকে হায়াত সম্পর্কে নিশ্চিত করবে এবং তার নিকট ভাল কথা আলোচনা করবে, দুনিয়াবী কোন বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। কেননা, সে সময় ফেরেশতারা উপস্থিত লোকদের কথার উপর আমীন আমীন বলতে থাকে। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু ব্যক্তিকে তার হায়াত সম্পর্কে এভাবে নিশ্চিত করতেন:

لَا بَأسَ طَهُوْرٌ إنْ شَاءَ اللَّهُ.

ভয়ের কোন কারণ নেই, ইনশা-আল্লাহ আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩৬১৬, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৯১৮, 

কিতাবে লিখেছে, রোগীকে দেখতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য এটাই যে, সাক্ষাতকারী তাকে তার হায়াত সম্পর্কে নিশ্চিত করবে। যাতে করে সে শান্তি ও সুস্থতাবোধ করে এবং যতক্ষণ বেঁচে থাকে নিশ্চিত মনে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং যিকির আযকার করতে পারে। আহকামে মায়্যিত-২০


৫. রোগী দেখতে গেলে তার নিকট দু‘আ চাইবে। কারণ, তার দু‘আ আল্লাহ তাআলার নিকট ফেরেশতার দু‘আর মত মাকবুল। ইবনে মাজাহ শরীফ-হাদীস নং ১৪৪১


৬. তার জায়েয খায়েশ/চাহিদা পূর্ণ করবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, একদা এক মুমূর্ষু রোগীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, কি খেতে চাও? সে জবাবে বললো, গমের আটার রুটি। তৎকালীন যুগে আটা সহজলভ্য ছিল না। 

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের রা. মাঝে ঘোষণা করলেন তাদের কারো কাছে গমের আটা থাকলে অনতিবিলম্বে এ ব্যক্তির জন্য পাঠিয়ে দিতে। ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ১৪৩৯


৭. মৃত্যু আসন্ন মনে হলে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে কেউ মুমূর্ষ রোগীর পাশে বসে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করবে বা অন্যের মাধ্যমে তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করবে। কারণ, তা দ্বারা রোগীর মৃত্যু কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়।আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৩১২১, ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ১৪৪৮, 


৮. তাকে কালিমায়ে তায়্যিবার তালক্বীন করতে থাকবে। অর্থাৎ তার নিকট বসে সে শুনতে পায় এতটুকু আওয়াজে একজন উক্ত কালিমা পড়তে থাকবে। যাতে সে তা শ্রবণ করে নিজেও পড়তে আগ্রহী হয় এবং তা পড়ে নেয়। 


মৃত্যুর পূর্বে যদি একবার পড়ে নেয়, অতঃপর মৃত্যুর পূর্বে আর দুনিয়াবী কথা-বার্তায় লিপ্ত না হয়, তাহলে সে হাদীসের মর্মানুযায়ী (যার সর্বশেষ উচ্চারিত বাক্য হবে-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৯১৬। জান্নাতের অধিকারী হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কালিমা পাঠের পর কোন দুনিয়াবী কথা-বার্তায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাহলে পুনরায় তার নিকট বসে উক্ত কালিমার তালকীন করতে থাকবে। 

যাতে করে সে পুনরায় পড়তে আগ্রহী হয়ে তা পড়ে নেয় এবং তার শেষ কথা - লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, একবার পড়ার পর আর পড়ানোর চেষ্টা করবে না। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৯১৬, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৩১১৭, আদ্ দুররুল মুখতার ২/ ১১৯


No comments

Powered by Blogger.