হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. || ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী




 Hazrat Maulana Ilyas Rah.  || 

A Guardian of Islam  


নাম : ইলিয়াস
পিতার নাম: তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও আবেদ মাওলানা ইসমাইল রহ. ঐতিহাসিক নাম: আখতার ইলিয়াস
জন্মস্থান: ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের মুযাফ্ফর নগর জেলার অন্তর্গত কান্ধালা নামক শহরে ১৩০৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
ইন্তেকাল: ১৯৪৪ সালের ১২ জুলাই মৃত্যুর একদিন আগে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কাল কি বৃহস্পতিবার? বলা হলো ‘জ্বি হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, আমার কাপড়-চোপড় দেখে নাও কোনো নাপাকি আছে কিনা। নেই শুনে খুশি হলেন। ভোররাতে ফজরের আযানের কিছুক্ষণ আগে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।


★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর শৈশব
তার শৈশবকাল নিজ নানার বাড়ি কান্ধালায় এবং নিজ পিতা হযরত মাওলানা ইসমাইল সাহেব রহ. এর সান্নিধ্যে দিল্লীর নিজামুদ্দীনে অতিবাহিত করেন। তখন তার পুরো পরিবার কান্ধালায় অবস্থান করছিলো। পরিবারের নারী-পুরুষ সকল সদস্যবৃন্দের মধ্যে ঈর্ষনীয় ধর্মপরায়ণতা ছিল। সদাসর্বদাই তারা অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরে মশগুল থাকতেন।


★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর প্রাথমিক শিক্ষা
পরিবারের অন্য শিশুদের মতো তাঁরও মকতব থেকে শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী শৈশবেই কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। এই পরিবারের হিফজুল কুরআন এর প্রচলন এতো ব্যাপক ছিল যে মসজিদের দুই কাতার পর্যন্ত মুয়াজ্জিন ছাড়া কোন গাইরে হাফেজ দাঁড়াতো না।


★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর লেখাপড়ায় গভীর অধ্যবসায়
হজরত ইলিয়াস রহ. ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় গভীর মনযোগী ছিলেন। প্রতি দিনের সব পড়া শেষ করে বাকি সময় যিকির ও অন্যান্য অযিফায় কাটিয়ে দিতেন। শেষ রাত্রে নিয়মিত তাহাজ্জুদ, নামাজ, যিকির, দু‘আ ও রোনাজারি-আহাজারিতে নিমগ্ন থাকতেন।


★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর গাঙ্গুহে অবস্থান
পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তথা কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর সময় তিনি গাঙ্গুহী রহ. এর মতো পরশপাথরের সান্নিধ্যে অতিবাহিত করেন। 

হজরত ইলিয়াস রহ. বলতেন, যখনই হজরত গাঙ্গুহী রহ. এর সান্নিধ্য ও বরকতপ্রাপ্ত কোন বুজুর্গ গাঙ্গুহে আসতেন তখনই বড়ভাই আমার সবক বন্ধ করে দিয়ে বলতেন, এখন তোমার সবক এটাই যে তুমি তাদের সাহচর্যে থাকবে ও তাদের মূল্যবান কথা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবে। 


★হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি
শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ. এর কাছে হাদীস পড়ার জন্য ১৩২৬ হিজরীতে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং শাইখুল হিন্দ রহ. এর কাছে বুখারী শরীফ ও তিরমিযী শরীফ পড়েন।


★হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এরইসলাহী সম্পর্ক
হজরত রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ. সাধারণত ছাত্রদের কে বাইআত করাতেন না। কিন্তু ইলিয়াস রহ. এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ছাত্র অবস্থায়ই তাকে বাইয়াত করান। হযরত ইলিয়াস রহ. বলেন, যখন আমি যিকির করতাম তখন হৃদয়ের গভীরে এক ধরণের প্রবল চাপ অনুভব করতাম। 


বিষয়টি হযরত গাঙ্গুহী রহ. কে জানালে তিনি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলেন যে, হযরত কাসেম নানুতুবী রহ. এমন অভিযোগ হাজী ইমদাদুল্লাহ রহ. এর সমীপে উত্থাপন করেছিলেন। তখন হাজী সাহেব তাকে লক্ষ করে বলেছিলেন “আল্লাহ আপনাকে দিয়ে দ্বীনের বড় কোন খেদমত নিবেন” সুতরাং আশা করি তোমাকে দিয়েও আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের বড় কোন খেদমত নিবেন।


★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর মুবারকময় কর্মজীবন
শিক্ষাজীবন সমাপ্তের পর ১৩২৮ হিজরীতে মাওলানা ইলিয়াস রহ. সাহারানপুর মাযাহিরুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৩৩০ হিজরি মোতাবেক ১৭ এপ্রিল ১৯১২ সালে তিনি মামা মৌলভী রওফুল হাসান সাহেবের কন্যাকে বিবাহ করেন। 

১৩৩৩ হিজরিতে হজ্ব পালনের জন্য তিনি মক্কা শরীফ গমন করেন। মেঝ ভাই ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি ভক্ত ও অনুরক্তদের অনুরোধে বস্তি নিজামুদ্দীনে অবস্থিত মসজিদ ও মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর ১৯২০ সালে তিনি ভারতের মেওয়াত অঞ্চল থেকে তাবলীগী দাওয়াতের সূচনা করেন। 


এটি দিল্লীর দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ছিল ‘মেও’ জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। বর্তমানে গোরগাঁও, আলাওয়ার, ভরতপুর ও মথুরার কিছু অংশ নিয়ে মেওয়াত এলাকা বিস্তৃত। এই অঞ্চলের জনগণ ছিল নামে মাত্র মুসলমান। তাদের আচার-আচরণ ছিল বহুক্ষেত্রে আরব জাহেলিয়াতের কাছাকাছি। 


আর্যদের এ দেশে আগমনের বহু পূর্ব থেকে মেও গোষ্ঠীরা এই এলাকায় বসবাস করতো। দিল্লীর মুসলিম সালতানাতের যুগে মেওয়াতীরা বনজঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে লুটপাট করতো। ১২৬০ সালে গিয়াসুদ্দীন বলবান মেওয়াতী দস্যুদের শায়েস্তা করার জন্য এক বড় অভিযান পরিচালনা করেন। এমন একটি এলাকা থেকেই তাবলীগ জামাতের সূচনা বিস্ময়কর।


প্রথমে মক্তব শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইছলাহ ও সংশোধনের প্রয়াস চলে। পরে ১৩৪৪ হিজরিতে দ্বিতীয় হজ্ব থেকে ফিরে এসে তিনি দাওয়াতের ও গাশতের কাজ শুরু করলেন। তারপর তাবলীগ জামাতের বিকাশের কথা অনেকেরই জানা।


জীবনের শেষ দিকে মাওলানা ইলিয়াস রহ. ইলম ও ফিকিরের প্রতি তাকিদ ও তারগীব দিতে লাগলেন। যারা অশিক্ষিত, তাদের প্রতি বেশি দরদ দেখালেন। যাকাত আদায় করা ও তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার ওপর জোর দিলেন।

★ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.'এর আধ্যাত্মিক খেলাফত লাভ
ফকীহুন নাফস আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এর ইন্তেকালের পর শায়খুল হিন্দ রহ. এর পরামর্শে খলীল আহমদ সাহরানপুরী রহ. এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বিশেষ তত্ত্বাবধানে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা সাধন করেন ও খিলাফত লাভ করেন। 

এছাড়াও শাহ আব্দুর রহিম সাহেব রায়পূরী রহ., মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. ও আশরাফ আলী থানভী রহ. প্রমূখ বুযুর্গকে তিনি খুব মুহাব্বাত করতেন। এবং তারাও হযরত ইলিয়াস রহ. কে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এবং স্বীয় ভাতিজা কুতুবুল আলম শায়েখ যাকারিয়া রহ.  এর সাথে পরামর্শ করে তিনি কাজ করতেন।

No comments

Powered by Blogger.