শিরক কাকে বলে? শিরক 'এর বিবরণ এবং বর্ণণা
হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে, শেষ যুগে ঈমান রক্ষা করা কঠিন হবে। যেমন কঠিন কাজ হাতের মুঠোয় জলন্ত আগুনের কয়লা রাখা। তথাপি সাবধান হতে হবে ! জীবন দিয়ে হলেও প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের হেফাযত করতেই হবে। ঈমান চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- ‘যারা সরল পথ (ইসলামের শিক্ষা) প্রকাশ পাওয়ার পর রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুসলমানের তরিকা ছাড়া অন্য তরীকা অবলম্বন করবে, আমি তাদেরকে সেই পথগামীই করব এবং পরিণামে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।
জাহান্নাম ভীষণ মন্দ জায়গা। আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার পাপ কিছুতেই আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্যান্য পাপ যার জন্যে যতটুকু ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে, তারা মহাপাপী।
শিরক, বিদ‘আত, শয়তানের আনুগত্য অত্যন্ত জঘন্য অন্যায়, নিন্দনীয় এবং ঈমানের জন্যে অনিষ্টকর। এসব কাজ করলে একত্ববাদ ও রিসালাতের বিশ্বাস নষ্ট হয়। ঈমানদারগণ উক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে জেনে সেগুলো হতে বিরত থেকে নিজ নিজ ঈমান রক্ষা করতে চেষ্টা করবেন।
প্রচলিত ধ্যন ধারণা সমূহের মধ্যে কতগুলো কুফর ও শিরক পর্যায়ের, আর কতগুলো কুফর ও শিরক তো নয়, কিন্তু কুফর ও শিরকের কাছাকাছি। আর কতগুলো বিদ‘আত এবং কতগুলো হারাম, মাকরূহ ও গুনাহে কবীরা।
★ শিরক কাজসমূহ'এর বিবরণ
নিম্নলিখিত কাজগুলো শিরক। এসব কাজ হতে দূরে থাকা অপরিহার্য কর্তব্য। আপনার একত্ববাদের প্রতি আনুগত্যের জন্য অপরিহার্য।
১. কোন বুযুর্গ বা পীর সম্বন্ধে এ রকম আক্বীদা রাখা যে, তিনি সবসময় আমাদের সব অবস্থা জানেন।
২. জ্যোতির্বিদ, গণক, ঠাকুরদের নিকট অদৃষ্টের কথা জিজ্ঞেস করা।
৩. কোন পীর-বুযুর্গকে দূরদেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে, তিনি তা শুনতে পেয়েছেন।
৪. কোন পীর-বুযুর্গ, জিন-পরী বা ভূত-ব্রাহ্মণকে লাভ-লোকসানের মালিক মনে করা।
৫. কোন পীর বুযুর্গের কবরের নিকট সন্তানাদি বা অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করা।
৬. পীর বা কবরকে সিজদা করা।
৭. কোন পীর-বুযুর্গের নামে শিরনি, সদকা বা মান্নত মানা।
৮. কোন পীর-বুযুর্গের দরগাহ বা কবরের চতুর্দিক দিয়ে তওয়াফ করা।
৯. আল্লাহর হুকুম ছেড়ে অন্য কারো আদেশ বা সামাজিক প্রথা পালন করা।
১০. কারো সামনে মাথা নিচু করে সালাম করা বা হাত বেঁধে নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকা।
১১. মুহাররমের সময় তাজিয়া বানানো।
১২. কোন পীর-বুযুর্গের নামে জানোয়ার যবেহ করা বা কারো দোহাই দেওয়া।
১৩. পীরের বাড়ির বা কোন বুযুর্গের দরগাহ বা তীর্থকে, কাঁবা শরীফের মতো আদব বা তা’যিম করা।
১৪. কোন পীর-বুযুর্গ বা অন্য কারো নামে ছেলের নাক, কান ছিদ্র করা, আংটি পরান, চুল রাখা, টিকি রাখা ইত্যাদি
১৫. আলী বখশ, হোসাইন বখশ ইত্যাদি নাম রাখা।
১৬. কোন জিনিসের বা ব্যারাম-পীড়ার ছুত লাগে বলে বিশ্বাস করা।
১৭. মুহররম মাসে পান না খাওয়া, নিরামিষ খাওয়া, খিচুড়ি খাওয়া ইত্যাদি।
১৮. নক্ষত্রের তাছির মানা বা তিথি পালন করা।
১৯. ভালো-মন্দ বা বার তারিখ জিজ্ঞেস করা। যেমন, অনেকে জিজ্ঞেস করে, এই চাঁদে বিবাহ শুভ কি-না? কোন দিন নতুন ঘরে যেতে হয়? রোববারে বাঁশ কাটা যায় কি-না? ইত্যাদি।
২০. গণকের নিকট বা যার ঘাড়ে জিন সওয়ার হয়েছে, তার নিকট হাত দেখিয়ে অদৃষ্ট জিজ্ঞেস করা।
২১. কোন জিনিস হতে কু-লক্ষণ ধরা বা কুযাত্রা মনে করা। যেমন, যাত্রামুখে কেউ হাঁচি দিলে অনেকে সেটাকে কু-যাত্রা মনে করে থাকে।
২২. কোন দিকে যাত্রা করার সময় ঘরের দুয়ারে মা খাকি বলে সালাম করে বিদায় গ্রহণ করা।
২৩. কোন দিন বা মাসকে অশুভ মনে করা।
২৪. কোন বুযুর্গের নাম ওজীফার মতো জপন করা।
২৫. এ রকম বলা যে, আল্লাহ ও রাসূলের মর্জি থাকলে এ কাজ হবে, বা আল্লাহ-রাসূল যদি চান, তবে এ কাজ হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সমকক্ষ নয়। সব কিছুরই একক প্রার্থী একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
২৬. এ রকম বলা যে, উপরে খোদা, নিচে আপনি, আমার ওমুক কাজটা করে দেন, কেননা উপরে নিচে ডানে বামে সব খানেই আছেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
২৮. তেমাথা পথে ভেট দেওয়া, পূজা উপলক্ষে কর্ম বন্ধ রাখা, দোল-পূজায় আবির মাখানো, বিষকরম পূজায় ছাতু খাওয়া, পৌষ মাস সংক্রান্তিতে গরু দৌড়ানো, ঘোড়া দৌড়ানো, আশ্বিন মাস সংক্রান্তিতে গাশ্চি, গোফাগুণে পূজা উপলক্ষে আমোদ উৎসব, নতুন কাপড় ক্রয়, পার্বণী দেয়া, মনসা পূজা বা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নৌকা দৌড়ানো। হিন্দুদের আড়ঙ্গে, মিছিলে, উৎসবে যাওয়া।
২৯. ছবি, ফটো বা মূর্তি রাখা, বিশেষ করে কোন বুযুর্গের ফটো তা’যিমের জন্য রাখা।
এইসব সবই শিরকের কাজ। একজন মুসলমান হিসেবে আপনার কথা কাজ প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা সব কিছুর একমাত্র একক মালিক, একথা কাজে কর্মে প্রমাণ দিতে হবে।
No comments