অবধারিত মৃত্যু || আমাদের মিথ্যে প্রয়াস

certain-death-our-false-endeavors



মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে; অতঃপর যাকে দোযখ থেকে মুক্তি দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে হবে সাফল্যবান। বস্তুত পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান-১৮৫)


পরকালের চিন্তা মূলত যাবতীয় দুঃখ বেদনার প্রতিকার ও সমস্ত সংশয়ের উত্তর। উক্ত আয়াতে এই বাস্তব তাকেই স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। তাই এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে যদি কখনো কোথাও বিধর্মীরা বিজয়ী হয়ে যায় এবং পরিপূর্ণ আরাম আয়েশ লাভ করে আর তারই বিপরীতে মুসলমানগণ যদি বিপদাপদ, জটিলতা ও পার্থিব উপকরণে সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়, তাহলে তা তেমন বিস্ময়কর কিছু নয়। তাতে দুঃখিত হওয়ারও কিছু নেই। 


কারণ, পার্থিব দুঃখ-কষ্ট বা আরাম আয়েশ উভয়টিই কয়েক দিনের জন্য মাত্র। উপরন্তু এর দ্বারা মুমিনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়, পরকালের হিসাব নিকাশ খুব সহজ হয়ে যায়। কারণ যার অর্থ কড়ি কম, তাঁর খরচ‌ও কম, তাঁর হিসেব‌ও কম, একদম সোজা হিসাব। 


কোনো প্রাণীই মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবে না, এটা কঠিন সত্য। মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট ক্ষনিকের ভেবে ধৈর্য সহকারে জীবন অতিবাহিত করতে হবে। আমাদের টার্গেট থাকতে হবে কোনো মতে খেয়ে পরে পাকা পোক্ত ঈমান আমল নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া। পরপাড়ে আমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন আনন্দ আর আরাম আয়েশ।


পৃথিবীর সুখ স্বাচ্ছন্দ্য পৃথিবীতেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু পারপাড়ের সুখ শান্তি অনন্তকালের, যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। পৃথিবীর সুখ শান্তি, আরাম আয়েশ, ধন কড়ি মৃত্যুর সাথে সাথেই সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়, অর্থাৎ এগুলো তখন আর আপনার কোনো কাজেই আসবে না। কয়েকদিনের সুখ-দুঃখ নিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।


মৃত্যুর পরবর্তী স্থায়ী জীবনের চিন্তা করাই উচিত, সেখানে কি হবে, কি ভাবে থাকবে সেই চিন্তা করা উচিত। ঈমান আমলের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, কিভাবে নিতে হবে এবং কতটুকু নিতে পারলাম ভালো ভাবে অনুধাবন করতে হবে। আর পরকালে নিজের কৃতকর্মের পুরস্কার অবশ্যই আপনাকে দেওয়া হবে। 


বুদ্ধিমানের পক্ষে কেবল এ বিষয়েই চিন্তা করা উচিত। সেই লোকই সত্যিকার কৃতকার্য, যে কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং জান্নাতের স্থায়ী আরাম আয়েশ, সুখ শান্তির অধিকারী হবে। পক্ষান্তরে পাপীদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যেখান থেকে তার কোনও দিনও বের হতে পারবে না। 


তারা যদি পৃথিবীর সামান্য কয়েকদিনের পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গর্বিত হয়ে উঠে, তবে সেটা একান্ত ধোঁকাবাজি আর প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। মানুষ সারা জীবন যদি ভাগতে থাকে,যেখানে তাঁর মৃত্যু হবে সেখানে গিয়ে থেমে যাবে।মৃত্যুর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে পরকালের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। 


উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে - দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার উপকরণ’। তার কারণ এই যে, সাধারণতঃ এখানকার ভোগ বিলাসই হবে আখিরাতের কঠিন যন্ত্রণার কারণ। পক্ষান্তরে, দুনিয়াতে দীনের জন্য দুঃখ-কষ্ট হবে আখিরাতের সঞ্চয়। (মা‘আরিফুল কুরআন, ২/ ২৫৫)


হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি, যে নিজের নফস ও খাহেশকে নিজের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয় এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। (তিরমিযী শরীফ- হাদীস নং ২৪৫৯, ইবনে মাজাহ শরীফ- হাদীস নং ৪২৬০, মিশকাত শরীফ, ২/ ৪৫১)i

No comments

Powered by Blogger.