প্রিয়জনের পরলোকগমনে সান্ত্বনা লাভের উপায়


ways-find-comfort-passing-loved-one




"মানুষ যদি দুঃখ-বেদনার বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকে এবং সবসময় কেবল দুঃখ-বেদনা নিয়েই পড়ে থাকে তাহলে তার দীন-দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে"


মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী রহ. এ প্রসঙ্গে কয়েকটি মূল্যবান কথা ইরশাদ করেছন,প্রিয়জনের ইন্তিকালে মানুষ যত দুঃখিত ও মর্মাহতই হোক না কেন তা কমই বটে। এই নাযুক মুহূর্তে বেদনার্ত হওয়া মানুষের প্রকৃতিগত ও স্বভাবজাত বিষয়। 


এজন্য শরীয়ত এক্ষেত্রে দুঃখ-বেদনার নিন্দা করেনি। বরং মর্মাহত ব্যক্তিকে বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে, যাতে ধীরে ধীরে তার দুঃখ কমে আসে এবং মনোবেদনা লাঘব হয়। মানুষ যদি দুঃখ-বেদনার বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকে এবং সবসময় কেবল দুঃখ-বেদনা নিয়েই পড়ে থাকে তাহলে তার দীন-দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে। 


আর এটা মানব জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। অপর দিকে দুঃখ প্রকাশে অশ্রু প্রবাহিত করতে এবং কাঁদতে নিষেধ করাও সমীচীন নয়। কেননা মর্মবেদনা লাঘবের জন্য অনুচ্চস্বরে কান্নার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া উদগত কান্না কষ্ট করে চেপে রাখলে শারীরিক ক্ষতিরও আশংকা থাকে। 


এজন্য শরীয়ত কাঁদতে নিষেধ করেনি বরং কান্না আসলে মন ভরে কেঁদে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সশব্দে চীৎকার করে কাঁদা যেহেতু মানুষের আয়ত্তাধীন, এজন্য তা নিষেধ করা হয়েছে। তা ছাড়া সশব্দ কান্না অন্যদের উপরও মন্দ প্রভাব ফেলে। কারণ, কান্না হল সংক্রামক ধাঁচের, একজনের দেখাদেখি অন্যের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে। 


তবে অনিচ্ছাকৃত চীৎকার ধ্বনি বেরিয়ে গেলে তাতে কোন দোষ নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। তবে ততটুকু সম্ভব শব্দহীন কান্না করার চেষ্টা করা, এতেই রয়েছে অনেক মহত্ত্বতা। 


পরম সত্য যে, যার আগমন ঘটেছে তাকে একদিন এখান থেকে বিদায় নিতেই হবে। তবে এর জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটি সময় বেঁধে দিয়েছন।কিন্তু সুনিশ্চিত ও অনতিক্রম্য সেই সময়টি আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। 


তিনি ব্যতীত আর কারও তা জানা নেই। তাই তো দেখা যায়- অসুখ-বিসূখ কিচ্ছু নেই; একেবারে সুস্থ-সবল মানুষটি বিলকুল রওয়ানা হয়ে যায়। বস্তুতঃ এটিই তার নির্দিষ্ট সময়। আজকাল এটাকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ ও ব্রেন স্ট্রোক বলে ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু আদতে মৃত্যু এক চিরন্তন সত্য। 


পৃথিবীর প্রত্যেক জোড়ার এবং প্রতি দু‘জনের একজনকে অবশ্যই অপরজনের বিয়োগ-বিচ্ছেদের সম্মুখীন হতে হবে। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীকে, স্ত্রীর মৃত্যুতে স্বামীকে, পিতা-মাতার ইন্তিকালে ছেলে-সন্তানকে, সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতাকে, ভাইয়ের তিরোধানে বোনকে অনুরূপ প্রত্যেক দুজনের একজনকে। 


একথাও স্পষ্ট যে, দু‘জনার একজনকে ইচ্ছাধিকার দেয়া হলে কেউ-ই মৃত্যুযন্ত্রণা বরণ করতে স্বেচ্ছায় রাজি হতো না। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর ব্যাপারটি স্বয়ং তার আয়ত্তাধীন রেখেছেন। বস্তুতঃ তিনিই প্রাণ সঞ্চার করেন এবং তিনিই প্রাণ সংহার করেন।


একথাও চিন্তা করা দরকার যে, মৃত্যুর মাধ্যমে আলাদা হওয়া বা বিচ্ছেদ ঘটা এটা সাময়িকের জন্য চিরদিনের জন্য নয়। যেমন দুই বন্ধুর একজন ভ্রমণ করে অন্য কোন দেশে চলে গেল আর অপরজন কোন কারণ বশতঃ তার সঙ্গে যেতে পারল না। কিন্তু রয়ে যাওয়া বন্ধু তার ভ্রমণরত বন্ধুর দেশে কখনো গেলেই তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে। 


মৃত্যুরও এই একই অবস্থা মৃত ব্যক্তি তো পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে না, কিন্তু এখানকার ব্যক্তি মুত্যুর মাধ্যমে সেখানে পৌঁছে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারে।আমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা ও গোলাম। আমাদের সকলকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। 

No comments

Powered by Blogger.