অহংকার এবং আত্মতুষ্টি ।। দুই কাজের এক‌ই পরিণতি


pride-complacency-both-things-have-same-end



কথায় আছে, অহংকার পতনের মূল। তাকাব্বুর বা অহংকার এর অর্থ হল প্রশংসনীয় গুণাবলীর মধ্যে নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, হক ও সত্যকে অস্বীকার করা। 


যখন মানুষ নিজের ব্যাপারে এরূপ ধারণা পোষণ করে এবং আল্লাহর দেয়া গুণসমূহকে নিজের কৃতিত্ব মনে করে তখন তার আত্মা ফুলে উঠে, অতঃপর কাজকর্মে এর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে থাকে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাস্তায় চলার সময় মাথা উঁচিয়ে চলা, মানুষের সাথে অসম আচরণ করা, সাধারণ বিষয় নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করা ইত্যাদি। 


পাশাপাশি অন্যদেরকে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখা বা আচরণ করা অথবা কেউ আগে সালাম না দিলে তার উপর বেঁকে বসা, কেউ সম্মান না করলে তার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া, কেউ সঠিক উপদেশ দিলেও নিজের মন মতো না হওয়ায় সেটাকে অবজ্ঞা করা। 


সত্য কথা জানা সত্ত্বেও সেটাকে না মানা। সাধারণ মানুষকে এমন দৃষ্টিতে দেখা যেমন গাধাকে দেখা হয় ইত্যাদি। এই স্পষ্ট অহংকারের লক্ষণ। একজন অহংকারী মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়।


পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অনেক আয়াতে ‘অহংকার’ এর নিন্দাবাদ করা হয়েছে, অহংকারের কারণেই ইবলীস শয়তান বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অহংকারের কারণেই আবূ জাহাল মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সত্য জেনেও অস্বীকার করেছে।


আত্মতুষ্টি বা নিজেকে নিজে সঠিক মনে করা মূলত: এটা অহংকারেরই ভূমিকা বা প্রাথমিক রূপ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, অহংকারের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় নিজের স্বত্তকে বড় মনে করা হয় আর আত্মতুষ্টির মধ্যে অন্যদের সাথে তুলনা করা ছাড়াই স্বীয় স্বত্তকে নিজ খেয়ালে পরিপূর্ণ মনে করা হয়।


আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহকে নিজের হক মনে করা হয়, অর্থাৎ, এটাকে আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ মনে করা হয় না এবং সেটা যে কোন মুহূর্তে ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে সে ব্যাপারে শংকাহীন হয়ে পড়া। এটাকেই তাসাওউফের পরিভাষায় “উজুব” বা “খোদপছন্দী” বলে। এটার সংশোধন করা না হলে এটাই কিছু দিন পরে অহংকারে পরিণত হয়ে মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।


কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ মানুষকে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছে। (সূরায়ে বায়্যিনাহ আয়াত-৫) তাই আমাদের উচিত অহংকার বর্জন করে বিনয়ের সাথে জীবন যাপন করা। 

No comments

Powered by Blogger.