হক্কানী উলামায়ে কেরাম চেনার উপায়

easy-ways-know-haqqani-ulama-keram




দুনিয়া এবং আখেরাত দুটি বিপরীতমুখী বস্তু, দুই মেরুর সমতুল্য। এক বস্তুকে পেতে চাইলে আরেক বস্তুকে হারাতেই হবে। নিশ্চয় দুই বস্তু একসাথে হাসিল করা সম্ভব নয়। এ কথা আপনাকে মনে প্রাণে উপলব্ধি করে যে, ইহকালের চেয়ে পরকাল অনেক গুণে উত্তম, অনেক গুলো সম্মানজনক। 

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন না করে শুধু দুনিয়া পাওয়ার জন্য ইলম অর্জন করে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণটুকুও পাবে না। (আবু দাউদ হাঃ নং-৩৬৬৪, মুস্‌তাদরাকে হাকেম-১/৮০)

আজকাল আমাদের দেশে মাদ্রাসা মক্তবের অভাব নেই। আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে মানুষ সঠিক দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন। কিন্তু এর পরও সঠিক হক্কানী আলেম চেনা অনেক কঠিন। মাদ্রাসা থেকে মুফতি মুহাদ্দিস হয়ে বের হলেই, কিংবা পেশাকে আশাকে পরিপূর্ণ হলেও তাকে হক্কানী আলেম বলা যাবেনা, ততক্ষণ তার মধ্যে শরিয়ত সম্মত সঠিক চিহ্ন গুলো পাওয়া না যাবে, চলুন হক্কানী আলেম চেনার কিছু চিহ্ন জেনে নেয়া যাক।


হক্কানী উলামায়ে কিরাম চেনার সহজ উপায় 
১. হক্কানী উলামায়ে কিরাম ইলমে দ্বীন দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করেন না। কিন্তু উপার্জনের জন্য কিছু অবলম্বন করতে পারেন। 
২. একজন হক্কানী আলেম কমপক্ষে দুনিয়ার প্রতি নূন্যতম ঘৃণা, অনিহা এবং হীনতা প্রকাশ করবেন। 
৩. হক্কানী একজন আলেম আখেরাতের আযমত, স্থায়িত্ব, মহত্ত্ব এবং উহার সকল নিয়ামতের পবিত্রতার অনুভূতিতেই থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।
 

৪. একজন হক্কানী আলেম তার কথা ও কাজে কখনোই গড়মিল করবে না।অর্থাৎ, এমন নয় যে অপরকে নছীহত করে অথচ নিজেই আমল করে না। একজন হক্কানী আলেম কখনোই এমন করবেন না।
৫. তিনি এমন ইলম গ্রহণ করবেন, যা পরকালে কাজে আসবে। তিনি সব সময় ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী থাকবেন।
৬. একজন আলেম কোনো দিনও ভরপুর খাবার এবং নামি দামি পোষাক পরিচ্ছদ ও চাকচিক্যের পেছনে ছুটাছুটি করবেন না। কেননা এসব ব্যাপারে মধ্যমপন্থা ও ওলি আউলিয়াদের অনুসরণ করবেন।


৭. একজন হক্কানী আলেম কখনোই কোনো প্রভাবশালী লোকের মিথ্যা প্রশংসা করবে না। হোক সে বাদশাহ কিংবা সরকারি কর্মকর্তা। কেননা প্রয়োজন ছাড়া প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দূরে থাকাই ভালো।‌
৮. একজন হক্কানী আলেম সব সময় অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করবে। সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে।
৯. প্রতিটি কাজকর্মে আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসা প্রকাশ পাবে। সেই ব্যক্তির পোষাক, কথা-বার্তা, আচার আচরণ, চলা ফেরা সব কিছুতেই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ পাবে। 


১০. নম্রতা, ভদ্রতা, বিনয়, ভালোবাসা, সহনশীলতা একজন হক্কানী আলেমের অভ্যাসে পরিণত হবে। অহেতুক কথা-বার্তা, হাঁসি-ঠাট্টা, মাস্তি-মস্কারী হতে বিরত থাকবে। আত্মমর্যাদা, অহংকার, অন্যায় অবিচার কখনোই কবরে না।
১১. একজন হক্কানী আলেম কখনোই কাউকে অন্ধ অনুকরণ অনুসরণ করবেন না, বরং নিজেদের ইলম দ্বারা, সুক্ষ্ম জ্ঞান দ্বারা সব কিছু বিবেচনা করে দেখবেন, বুঝবেন, শুনবেন তার পর সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন।


১২. কঠোরভাবে বিদ‘আত, কুসংস্কার , কুপ্রথা হতে আত্মরক্ষা করবে, সমাজ রক্ষা করবে, দেশ রক্ষা করবে। একমাত্র প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবাদের আমল ও আদর্শ অনুসরণ করবেন। 
১৩. হক্কানী একজন আলেম কখনোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ছেড়ে দেবেন না, হোক সেটা বড় সড় সুন্নাত,হোক সেটা ছোটখাটো সুন্নাত যেমন দাঁড়ি রাখা, সুন্নাতি টুপি পরা, মেস‌ওয়াক করা, মাথা মুন্ডানো, কুর্তা পরিধান করা, পাগড়ি পরিধান করা, সালাম দেওয়া ইত্যাদি। 


অবশেষে, একটি কথাই বলবো। বর্তমান সময় অত্যান্ত বিভীষিকাময়, ভালো খারাপ, হক্কানী আলেম আর বিকৃত আলেম চেনা বড়‌ই সঠিন। কারো কথার মাধুরীতে মুগ্ধ হয়ে তার পেছনে ছুটছে, কারো নামের বাহারে ব্যাকুল হয়ে ছুটছে, কারো চেহারার চৌকসে ছুটছে কিন্তু সেই আলেম আদৌ একজন হক্কানী আলেম কিনা কেউই দেখছে না। 


সব চেয়ে বড় কথা হক্কানী আলেম চিনতে হলে কোরআন হাদিসের সঠিক জ্ঞান লাগবে, দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় কোরআন হাদিসের নূন্যতম জ্ঞানটুকু বেশিরভাগ মানুষের নেই। তাই যারতার মিষ্টি কথায় না পড়ে চোখ কান খোলা রাখুন, শরিয়ত মোতাবেক যদি জীবন যাপন করতে চান, আল্লাহর পথে যদি চলতে চান একটু সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।


No comments

Powered by Blogger.