খ্যাতির মোহ ক্ষতিকর

Lust for fame is harmful



খ্যাতি ও পদ পদবীর মোহ অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি আত্মিক ব্যাধি। এর কারণে মনে কলহের সৃষ্টি হয়। এজন্য নিজেকে সব সময় লুকিয়ে রাখাই ভালো । খ্যাতির পিছনে পড়া অনুচিত। খ্যাতির বিড়ম্বনা মানুষকে নিষ্ঠুর করে দেয়। এক সময় মানুষের বুকে লাথি মারতেও দ্বিধাবোধ করে না।


আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। (সূরা কিসাস-৮৩)


যদি কামনা-বাসনা ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা কাউকে সুখ্যাতি দান করেন, সেটা দোষণীয় নয়। যেমন নবীগণ আ. সাহাবীগণ রাযি. তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ রহ. তাঁদের প্রত্যেকেরই দুনিয়াতে খ্যাতি ছিল কিন্তু তাঁরা কেউ দুনিয়াতে খ্যাতির কামনা করেননি। আল্লাহ দান করে ছিলেন। 

∆ খ্যাতির মোহ যে ক্ষতি করবে আপনার !
✓ খ্যাতির মোহ মানুষের নিয়তের বিশুদ্ধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
✓ অপরাধ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। 
✓ খ্যাতির মোহ মানুষকে পার্থিব জীবনে বিপদগ্রস্ত এবং পরকালীন জীবনে লাঞ্ছনার মুখোমুখি করে।
✓ দুর্নীতি এবং সজন প্রিতির মতো গুরুতর অপরাধ কাজে জড়িয়ে পড়ে।
✓ হত্যাযজ্ঞ এবং হানাহানি মারামারিতে লিপ্ত হতে হবে।
✓ মানুষের ভেতর যখন খ্যাতির মোহ প্রচণ্ড রূপ নেয়, তখন তার ভেতর থেকে যাবতীয় কল্যাণচিন্তা লোভ পায়।


∆ ইসলামে খ্যাতির মোহ যেসব কারণে নিষিদ্ধ 
বেশ কিছু কারণে ইসলামে খ্যাতির মোহ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এটি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নিয়ে বাছাই কৃত কিছু হাদীস নিচে তুলে ধরলাম, যাতে সহজেই বুঝতে পারবেন যে কোন ইসলামে এটি নিষেধ করা হয়েছে,


১. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এমন তিনজন ব্যক্তির আলোচনা এসেছে, যারা পৃথিবীতে অনেক ভালো কাজ করেও পরকালে তাদের প্রাপ্তি ছিল শূন্য। এই তিন ব্যক্তির প্রথম জন খ্যাতির মোহে জিহাদ করে শহীদ হয়েছিল, দ্বিতীয় জন খ্যাতির মোহে জ্ঞানার্জন করেছিল এবং তৃতীয় জন খ্যাতির মোহে দান করেছিল। 

তাদের আল্লাহ বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রত্যাশা ছিল মানুষের কাছে খ্যাতি আর তোমরা তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের প্রাপ্তি শূন্য।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৩৭)


২. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সেরূপ পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০২৯)"


৩. কাব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)


৪. ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.) বলেন, ‘নেতৃত্বপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা অন্যকে হিংসা করে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, মানুষের দোষ খোঁজে এবং (সে ছাড়া) অন্য কারো প্রশংসা করা হোক।


এক আরবি কবি বলেছেন, ‘তোমার প্রয়োজনে মানুষের কাছে হাত পাতবে না। বরং হাত পাতবে তাঁর কাছে, যাঁর বদান্যতার দরজা সব সময় উন্মুক্ত। তিনি আল্লাহ, তাঁর কাছে না চাইলে তিনি ক্রুদ্ধ হন। 


আর মানুষের কাছে চাইলে তারা হয় ক্ষিপ্ত।’ এটিই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষের কাছে চাইলে তারা দিতে চায় না। তাই দুনিয়ার মোহ ও মানুষের সম্পদ থেকে বিমুখ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করাই মুমিনের কর্তব্য। তবেই অর্জিত হবে আল্লাহর ভালোবাসা এবং মানুষের ভালোবাসাও। 

No comments

Powered by Blogger.