চারটি অভ্যাস আজ‌ই ত্যাগ করুন

Quit the four habits today



আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে সমস্ত পাপ কাজ ছেড়ে দেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। দেখা অদেখা সব কিছুই আল্লাহ অবগত আছেন, তাই আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে নিজের জীবনকে সাজাতে হবে। এমন অনেক কাজ আছে যা আমরা আজও এখনও অভ্যাসগত ভাবে করেই যাচ্ছি, কিন্তু এগুলো পরিহার করা ঈমানের অঙ্গ। 

এমন কিছু কাজ আছে যা আপনার ঈমান এবং জীবন ধারায় প্রতিনিয়ত আঘাত করছে। আপনাকে আজ‌ই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, আর এই কাজ গুলো করা যাবে না, শুধু আমাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্য।

১. বেশি খাওয়ার অভ্যাস 
বেশি খাওয়া এবং উদর পূর্তি করে খাওয়া অসংখ্য গুনাহের মূল কারণ। বেশি খাওয়ার কারণে মানুষ অলস হয়ে পড়ে, স্বাভাবিক জীবন যাপন এবং ইবাদতের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। এজন্য হাদীসে পাকে ক্ষুধার্ত থাকার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। 


রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মানুষের জন্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রে পেটের থেকে খারাপ কোন পাত্র নেই। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো কিছু খুবই বাজে ভাবে পরিপূর্ণ করে রাখতে চান, তাহলে পেটের চেয়ে সেই বাজে পাত্র আর কিছু নেই। 
কম খাওয়ার উপকার সমূহ
✓. অন্তরে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়
✓. ইবাদতে তৃপ্তি পাওয়া যায়
✓. অবাধ্য চাহিদা গুলো অপদস্থ ও পরাজিত হয়
✓. কুলষীত আত্মাকে শাস্তি দেওয়া হয়
✓. পার্থিব চিন্তাভাবনা কমে আসে, জীবিকা নির্বাহের বোঝা হাল্কা হয়ে যায়।


২. অধিক কথা বলার অভ্যাস 
জিহ্বা হল অন্তরের দূত, অন্তরের যাবতীয় নকশা ও কল্পনাকে জিহ্বাই প্রকাশ করে। এজন্য জিহ্বার ক্রিয়া কলাপ বড়‌ই মারাত্মক হয়। এই জিহ্বাকে সবসময় সাবধান রাখতে হবে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকটা কথাই সংরক্ষণ করা হয়। (সূরা কাফ-১৮)

হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান এবং জিহ্বার ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব।(বুখারী হা: নং ৬৪৭৪)

কথা বেশী বলার ক্ষতিসমূহ 
✓. মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে
✓. পরনিন্দায় জড়িয়ে পড়ে
✓. অনর্থক ঝগড়া করা হয়
✓. বেশি কথা বললে বেশি ভুল হয়
✓. বেশি কথা বললে একে অপরের সাথে আন্তরিকতা কমে যায়।


৩. হিংসা করা 
কোন ব্যক্তিকে আরাম আয়েশ বা প্রাচুর্যে পূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত ধ্বংস হয়ে নিজের জন্য আর্জন হওয়ার আকাংখা করা, একেই বলা হয় হিংসা। হিংসা অত্যন্ত জঘন্য একটি ব্যাধি এবং পাপের কাজ।


আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দার উপর নেয়ামত দেখে হিংসাকারী কেমন যেন আমার ঐ বন্টনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট, যা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে বন্টন করেছি। নাউযুবিল্লাহ। (এহয়াউ উলুমুদ্দীন-৩/২৯২) 


অর্থাৎ কারো টাকা পয়সা সম্পদ দেখে অনেকেই বলি, "আল্লাহ ওমুককে এতো টাকা দিলো আমাকে কেন দিলোনা" এর অর্থ এটাই বহন করে যে আল্লাহর এই বন্টন সঠিক হয়নি, নাউযূবিল্লাহ। অথচ আল্লাহর সবকিছুই শতভাগ সঠিক, আল্লাহর চেয়ে উত্তম বন্টনকারী কেউ নেই। 


রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হিংসা নেকী সমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন শুকনো লাকড়ীসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়”। অবশ্য অন্যের কোন নেয়ামত দেখে সেটা তার মধ্যে বহাল থেকে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা যাকে “গিবতা” বা “ঈর্ষা” বলে সেটা জায়েয। (আবূ দাউদ হাদীস নং-৪৯০৩)


আল্লাহর কাছে এই ভাবে দোয়া করা যে, হে আল্লাহ আপনি ঐ ব্যক্তিকে কোটি টাকা দিয়েছেন, আমাকেও দেন, আপনি ঐ ব্যক্তিকে কতো সুন্দর একটা বাড়ি দিয়েছেন, আমাকেও দেন, আমিও তো আপনার গোলাম, আমিও তো আপনার বান্দা, আল্লাহ আমাকেও কিছু টাকা পয়সা দেন। 


৪. কৃপণতা ও সম্পদের মোহ
সম্পদের মোহই মূলতঃ কৃপণতার মূল কারণ কেননা প্রয়োজনে সম্পদ খরচ না করা সম্পদের প্রতি মায়া বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলার দেয়া সম্পদ আল্লাহর রাহে খরচ করতে হবে, নিজের প্রয়োজনে খরচ করতে হবে, আত্মীয় স্বজনদের জন্য খরচ করতে হবে, গরীব দুঃখী মানুষের জন্য খরচ করতে হবে।


একারণেই কুরআন কারীমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, "আল্লাহর দেয়া সম্পদে কৃপণতাকারীদের জন্য পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে"। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৮০) কাজেই সম্পদের মায়া ছেড়ে দিতে হবে, সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত মায়া মানুষকে নিষ্ঠুর করে দেয়। সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত মায়া মানুষকে আল্লাহ থেকে বিমুখ করে দেয়,কাজেই কৃপণতা করা যাবেনা।


হাদীসে পাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন , তোমরা লোভকে নিয়ন্ত্রণ কর কারণ এটা তোমাদের পূববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৫৭৮) সম্পদের মোহ মানুষকে আখেরাত থেকে উদাসীন করে দেয়। এই সম্পদ নিজের জন্য ভয়াবহ এক পরিস্থিতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে পরকালে। 


No comments

Powered by Blogger.