ঘুমানোর আগে অজু করার ফায়েদা এবং ফজিলত
ঘুমানোর আগে পবিত্রতা অর্জন করে নেওয়া জরুরি। কেননা কোনো কোনো হাদিসে এমনও এসেছে যে অজু অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। ঘুমানোর আগে পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমানো প্রিয় নবীজির সুন্নাত।
✓ প্রিয় নবী (সা.) আমাদের ঘুমানোর আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে, যেগুলো জানা বা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
১. ঘুম অনেকটা মৃত্যুর মতোই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু দেন এবং দিনে তোমরা যা কামাই করো তিনি তা জানেন। তারপর তিনি তোমাদের দিনে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন, যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমরা যা করতে তিনি তোমাদের সে বিষয়ে অবহিত করবেন।
২. ঘুমানোর আগে ওজু করার পার্থিব অনেক উপকারিতা রয়েছে; যেমন—অজুর মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভূত হয়, ফলে হতাশা দূর হয়ে যায়, যা সাধারণত ঘুমাতে গেলেই মানুষকে চেপে ধরার চেষ্টা করে।
অজু আমাদের মুখের তৈলাক্ততা দূর করে। অজুর মাধ্যমে মুখে জমে থাকা ছত্রাকগুলো দূর হয়ে যায়। ফলে ঘুমানোর আগে অজু আমাদের ত্বকের জন্যও ভালো। আপনার কাছে অনেক ফ্রেস ফিল মনে হবে।
বিউটি এক্সপার্টরা ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাজেই আপনি যখন ওজু করে নেবেন, আপনার উত্তম ভাবে মুখ ধোয়াও হয়ে যাবে আবার সুন্নাতও পালন করা হয়ে যাবে।
অজুর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সালামত আজিজ বলেন, অজু হৃদরোগ আরোগ্য হওয়ার একটি উত্তম উপায়। পাশ্চাত্যের মনস্তত্ত্ববিদরা প্রতিদিন অজুর মতো করে কয়েকবার দেহে পানি প্রবাহের পরামর্শ দেন।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) আমাকে বলেছিলেন, ‘হে আমার বেটা! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকবে। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার জান কবজ করেন তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ২৭৮৩)
পবিত্র কোরআনে এসেছে,আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯-১১)
মানুষ দিনের বেলায় দুনিয়ার যাবতীয় কাজ-কর্মে ব্যস্ত সময় পার করে। রাতে ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে বাসায় ফিরে। বিশ্রামের জন্য শয্যাগ্রহণের সুফল ও ফজিলতে রয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ অনেক হাদিস। যেমন,
বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন তুমি অজু করবে—নামাজের সময় যেমন করো। অতঃপর ডান পাশে ফিরে শয্যাগ্রহণ করবে।...’ (সহিহ বুখারি: ৬৩১১)
হাসিবুল ইসলামঃ ইমাম ইবন হিব্বান (রঃ) আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র সমীপে ফেরেশতাটি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল’’ ( সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৩১৭)
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ পবিত্রাবস্থায় জিকর করতে করতে ঘুমানো ব্যক্তি রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তা দান করবেন’। [আবু দাউদ, সহীহ হাদীস নঃ ৫০৩২, ১৩/২৬২]
ইসলামে অজু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও মহানবী (স.) এবং সাহাবায়ে-কেরাম অজু করতেন।এটি ফরজ না হলেও খুবই ফজিলতপূর্ণ সুন্নাত আমল।
No comments