বিবাহ-শাদীর কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা এবং সামাজিক কুসংস্কার

Some Common Misconceptions About Marriage






বিবাহ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা মহান আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিবাহ একটি জাগতিক কিংবা দৈহিক সম্পর্ক হলেও এটি একটি ইবাদত। যা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যাবর্শক। এটি অনেক সওয়াবের কাজ, এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়। মানব সমাজ একটি শৃঙ্খলায় আবধ্য হয়।


বর্তমান সমাজে বিবাহ গুলো সুন্নাত মতে তো হয়ই না উপরন্তু এটা বিভিন্ন ধরনের কুপ্রথা এবং বড় বড় অনেক পাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তির ঝড় বয়ে চলছে। এজন্য নিম্নে বিবাহ সম্পর্কিত কিছু ভুল এবং কুপ্রথা তুলে ধারা হল। যাতে এগুলো থেকে বিরত থাকা যায়,

✓ বিবাহ যেহেতু একটি ইবাদত, সুতরাং এ বিষয়কে ধর্মীয় দিক থেকেই প্রাধান্য দিতে হবে। দৈহিক সৌন্দর্য, ধন দৌলত ও বড় জাত পাতকে প্রাধান্য না দিয়ে স্বাভাবিক সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে।


✓ কোন কোন জায়গায় অভিভাবক এবং সাক্ষী ছাড়া শুধু বর কনের পরস্পরের সন্তুষ্টিতেই বিবাহের জন্য যথেষ্ট মনে করা হয় অথচ এভাবে বিবাহ বিশুদ্ধ হয় না। যথেষ্ট সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও যদি মেয়ে পক্ষের অভিভাবকের সম্মতি না থাকে,আর ছেলে মেয়ের পেশাগত, অর্থগত দিক থেকে সামঞ্জস্য না হয় তাহলে সে বিবাহও শুদ্ধ হয় না। মোটামুটি ছেলে মেয়ের অবস্থান কাছাকাছি হলেই ভালো হয়, বেশি উঁচু নিচুতে বিয়ে হলে পরবর্তীতে সংসারে কলহ বিবাদ সৃষ্টি হয়।


✓ আমাদের সমাজে কেউ কেউ ধারণা করেন যে, ঋতু চলাকালীন সময় বিবাহ শুদ্ধ হয় না। অথচ এ অবস্থায়ও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অবশ্য এ অবস্থায় মেলামেশা করা জায়েয নয়। কিন্তু বিবাহ বিশুদ্ধ ভাবেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। 


✓ অনেকে অনেক বয়স হওয়ার পর আর বিবাহ করেন না কিংবা প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বা মৃত্যু বরণ করার পর আর বিবাহ করেন না। অথচ শারীরিক বিবেচনায় তার বিবাহ করা জরুরী ছিল, তাহলে সে যেন বিবাহ করে নেয়, এতে সে অনেক পাপ থেকেও বেঁচে যেতে পারেন। 


✓ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় (উদাহরণ স্বরূপ) ৬০ বছরের বয়স্ক লোক অল্প বয়সী যুবতী মেয়েকে বিবাহ করে বসে। ফলে ঐ মেয়ে অলিখিত অত্যাচারের শিকার হতে হয়, এটি মোটেও সঠিক কাজ নয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যাপারটা ভালো ভাবেই মাথায় রাখতে হবে। 


✓ অনেকেই অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজের দুর্বলতা লুকিয়ে লোক দেখানোর জন্য বিয়ে করে স্ত্রীর জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এটা মারাত্মক গুনাহের কাজ। আগে চিকিৎসা নিতে হবে, পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে তাড়াহুড়ো করে বিবাহ করার প্রয়োজন নেই, এখানে দাম্পত্য কলহের শিকার হতে হবে।
 

✓ আমাদের সমাজে কেউ কেউ বিধবা মহিলাদের বিবাহ করাকে অপছন্দ করে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকাংশ স্ত্রী বিধবা ছিলেন। বিধবা মহিলাকে বিবাহ করা যেমন মানবিক কারণ হতে পারে এবং অনেক সামাজিক অবক্ষয় থেকেও বেঁচে থাকার উপায় হতে পারে। 



বিবাহ হোক সামাজিক সেতু বন্ধের নিয়ামক, বিবাহ হোক ধর্মীয় রীতিতে চির সুন্দর এটিই আমাদের সকলের প্রত্যাশা। বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তি কামনায় আমাদের দাবি, বিবাহ হোক সামাজিক কুসংস্কার মুক্ত, যৌতুক মুক্ত। সকলের দায়িত্ব এই বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া। 


No comments

Powered by Blogger.