বাচ্চাদের শাসন করা এবং ইসলামের বিধি বিধান

discipline-children-provisions-Islamic-law


 Discipline children and provisions in Islamic law 



অনেকেই মনে করেন, এখন কিছুই বলার দরকার নেই, বড় হলে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। এটা মারাত্মক ভুল। 

হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. বলেছেন, বাচ্চাদের স্বভাব-চরিত্র যা গড়ার পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে গঠন হয়ে যায়। এর পর ভাল-মন্দ যেটাই হল তা মজবুত ও পাকাপোক্ত হতে থাকে, যা পরবর্তীতে সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক ছোটবেলা থেকেই বুঝাতে হবে। এক সময় সে বুঝবে এবং উত্তম চরিত্র নিয়ে বড় হবে।


আজকাল বাসা-বাড়িতে, স্কুল-কলেজে, মাদ্রাসা মোক্তবসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের উপর শাসন এর নামের নির্যাতন চোখে পড়ে। শাসনের কোন মাত্রা নেই, কোনো মান নেই। এতে একদিকে শাসনকারী নিজের মান হারাচ্ছেন অপরদিকে অত্যাচারের শিকার শিশু বা ছাত্র রাগে-ক্ষোভে হয়তো পড়া-লেখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।


এর মূল কারণ হচ্ছে, বাচ্চাদের শাসন করার ক্ষেত্রে শরী‘আত আর মৌলিক পন্থা ও সীমা উপেক্ষা করা। চলমান পরিস্থিতিতে পিতা-মাতা ও শিক্ষক কর্তৃক সন্তান ও ছাত্রদের শাসন করার সঠিক পদ্ধতি জেনে রাখা সকলের কর্তব্য।
 

✓ কোন শিশু বা ছাত্র তার সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তা শোনামাত্রই প্রহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে চলবে না। কেননা, শরী‘আতে এক পক্ষের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা নেই। উভয় পক্ষের কথা না শুনে কোনরূপ সিদ্ধান্ত নেয়া বা একজনকে শাস্তি দেয়া যাবে না। 


✓ ইসলামে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চাদেরকে ছড়ি বা লাঠি দ্বারা প্রহার করার কোনো অবকাশ নেই। প্রয়োজনে ধমকি-ধামকি দিয়ে, কান ধরে উঠ-বস করিয়ে সাবধান করে দেয়া যেতে পারে, কিন্তু তার পর‌ও বাচ্চাদের ভেতর একধরনের ভয় কাজ করে, তাই ভালোবাসাই সর্বোত্তম পন্থা। 


✓ কোনো ধরনের অমানবিক শাস্তি দেয়া-যেমন, হাত-পা বেঁধে পিটানো, পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা, সিলিংয়ে ঝোলানো, কপালে পয়সা দিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে রাখা ইত্যাদি একেবারেই হারাম ও না-জায়েয।


✓ ছোট বাচ্চাদের শাসন করার সময় অতি রাগান্বিত হ‌ওয়া যাবে না। এমনিতেই ছোট বাচ্চারা কোনো অন্যায় করলে খুবই আতংকে থাকে। তবে কৃত্রিম রাগ প্রকাশ করে সাবধানতা অবলম্বনের পথ তরান্বিত করা যেতে পারে। 

✓ কোন বাচ্চার দ্বারা অন্য বাচ্চাকে বা এক ছাত্রের দ্বারা অপর ছাত্রকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এটা শাস্তি প্রদানের ভুল পন্থা। এতে বাচ্চাদের মধ্যে পরস্পরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অনেক শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে এক ছাত্র দ্বারা অপর ছাত্রের কান মলানো,কান টানা কিংবা বেত্রাঘাত‌ও করানো হয়, এটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্বতি।


✓ অনেক সময় দেখা যায়, সাজা প্রাপ্ত বাচ্চাকে নিয়ে সহপাঠীরা ঠাট্রা বিদ্রুপ করে থাকে, এটি খুবই হানিকর। শাস্তি প্রদান শেষে শিক্ষকের উচিত অন্যান্য ছাত্রদের বলে দেওয়া, “এ ব্যাপারে এর সঙ্গে কেউ ঠাট্টা বিদ্রূপ করবে না " ঠাট্টা বিদ্রূপ করা অনেক বড় গুনাহ।


✓ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কর্তব্য হল, সকল শিক্ষককে ছাত্রদের ব্যাপারে রিপোর্ট দিতে বলা, এবং সে অনুযায়ী তার অভিভাবককে ডেকে বলা, তার অভিভাবক ভালোবাসা দিয়ে নিজের সন্তানকে বুঝিয়ে দেবে।


অনেক শিক্ষক রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। সুতরাং রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম এমন শিক্ষক বাছাই করা। যে সকল শিক্ষক বাচ্চাদের ভালোবাসা দিয়ে পড়াতে পারবে, সে সকল শিক্ষদের প্রাধান্য দেওয়া। কেননা প্রহারের চেয়ে ভালোবাসা বেশি উত্তম।


সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচিত, যুগ উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে আসা। গতানুগতিক ধারণা থেকে ফিরে আসা। এমনিতেই সময় অনেক অনেক কঠিন, বাচ্চাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো কঠিন ব্যাপার, পড়া লেখার পরিবেশ সৃষ্টি করা ছাড়া উপায় নেই। 


No comments

Powered by Blogger.