সিজদা সাহু কাকে বলে, কখন সিজদা সাহু দিতে হয়, সিজদা সাহু কিভাবে দিতে হয়, বিস্তারিত আলোচনা

what-sijda-sahu-when-give-sijda-sahu-how-give-sijda-sahu-when-give-sijda-sahu-how-give-sijda sahu-detailed-discussion




সিজদা সাহু মানে ভুল শুধরানোর সিজদা, অর্থাৎ নামাযের মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়ে গেলে দুটি সিজদার মাধ্যমে তা শুধরানো যায়। তবে সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে শুধু ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার অপূর্ণতা পূর্ণ করা হয়।ফরয অথবা সুন্নাতের জন্য নয়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ আহকাম এর বিস্তারিত জেনে রাখা সকলের দায়িত্ব। 

In this article
সিজদা সাহু কাকে বলে
কখন সিজদা সাহু দিতে হয়
সিজদা সাহু কিভাবে দিতে হয়।



∆ সাহু সিজদা'র বর্ণণা
সাহু সিজদা'র সহীহ বর্ণণা অনেক হাদীস থেকেই পাওয়া যায়। নিম্নে সহীহ কিছু হাদীস দেওয়া হলো, এগুলো থেকে সহজেই বোঝা যায় সাহু সিজদা ওয়াজিব ভঙ্গের অপূর্ণতাকে নামাযকে পরিপূর্ণ করে।
✓ আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) জোহরের পাঁচ রাকাত আদায় করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নামাজ কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন কেন? (প্রশ্নকারী) বললেন, আপনি তো পাঁচ রাকাত আদায় করেছেন। অতএব তিনি সালাম ফেরানোর পর দুইটি সিজদা করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪০১)
✓ আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) জোহরের দু্ই রাকাত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন। দু্ই রাকাতের পর তিনি বসলেন না। সালাত শেষ হয়ে গেলে তিনি দুইটি সিজদা করলেন এবং অতঃপর সালাম ফেরালেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৫২; ইসলামিক ফাউন্ডেশন)


✓ আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক নামাজে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু্ই রাকাত আদায় করে— না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লিরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তার সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তার সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফেরানোর আগে তাকবির বলে বসে বসেই দুইটি সিজদা করলেন। অতঃপর সালাম ফেরালেন। 


∆ সিজদা সাহু দেয়ার নিয়ম 
সাহু সিজদা যার ওপর ওয়াজিব হয়েছে, সে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে। এরপর তাকবির বলে নামাজের মতো দুইটি সিজদা করে বসে যাবে এবং তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবে। সালামের আগে সিজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে তা মাকরুহে তানজিহি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮১৮৮; বুখারি; তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১)


∆ নামাজে কখন সাহু সিজদা দিতে হয়?
১. নামাজের কোনো ওয়াজিব কাজ ভুলক্রমে ছুটে গেলে, সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৮৭৪; আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৭৮০৮)
২. ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাত বা যেকোনো এক রাকাতে সুরায়ে ফাতিহা পড়তে ভুলে গেলে অথবা অনুরূপ নফল ও বিতরের যেকোনো রাকাতে ভুলক্রমে সুরায়ে ফাতিহা পড়া না হলে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৩)
৩. ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে কেরাত পড়া ভুলে গেলে, শেষ দুই রাকাতে তা পড়ে নেবে। তবে সিজদায়ে সাহু দেবে, নামাজের ধারাবাহিকতা লঙ্ঘনের কারণে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১/৪০৯)


৪. ফরজ নামাযের দুই রাকাত বা এক রাকাতে কিরাত মেলাতে ভুলে গেলে— সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি: ১২৪৩)
৫. কেউ যদি এক সিজদা করে পরের রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তখন ওই রাকাত দুই সিজদা দিয়ে সম্পন্ন করে ছুটে যাওয়া সিজদাও এর সঙ্গে মিলিয়ে নেবে (এক রাকাতে তখন তিন সিজদা হবে)। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে, এতে করে নামাজ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত)
৬. যদি তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠক ভুলে যায়, তা ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ, সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৮২)


৭. তাশাহহুদ পড়তে ভুলে গেলে, সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১২৪৩)
৮. বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে— সাহু সিজদা দিতে হবে। (বায়হাকি, হাদিস : ৪০৪২)
৯. প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের সঙ্গে দরুদ ইত্যাদি পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৫)


উপরোক্ত ভুল গুলো কেউ যদি করে ফেলেন এবং সিজদা সাহু দেওয়া ছাড়াই দোয়া দরুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেয়, তাহলে ওয়াজিব ভঙ্গের দায়ে সেই ব্যক্তির নাম হবে না, উক্ত নামায পুণরায় পড়তে হবে। সুতরাং নামাযের মধ্যে যদি কোনো ভুল হয়েই যায়,তাহলে সিজদা সাহু দিতে কিন্তু ভুলবেন না। 



No comments

Powered by Blogger.