পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সঠিক সময়

The correct timing of the five daily prayers





পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সঠিক সময় জেনে রাখা সকলের ঈমানী দায়িত্ব। কেননা কাজে অকাজে আমাদের অনেক সময় দেরি হয়ে যায়, অনেক সময় ভুলে যায়, তাই সঠিক সময় জেনে রাখা ভালো। আধুনিক এই যুগে হয়তো সব‌ই হাতের নাগালে কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক নির্দেশনা এবং মাশসআলা মাসায়েল জেনে রাখা সকলের ঈমানী দায়িত্ব। 


✓ যোহর নামাযের সঠিক সময় 
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। এবং প্রতিটা জিনিসের আসল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। জুম‘আ আর যোহরের নামাযের ওয়াক্ত এক ও অভিন্ন। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৩)


ঠিক দুপুরে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকে ঐ জিনিসের আসল ছায়া বলা হয়। কোনো কোনো ইমামের মতে আসল ছায়া ছাড়া প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যখন একগুণ হয়ে যায় তখনই যোহরের সময় হয়ে যায়। হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া এমন না। তাই একান্ত অপারগতা ছাড়া এই মতের উপর আমল করা যাবে না।


✓ আসর নামাজের সঠিক সময় 
যোহরের নামাযের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসারের নামাযের সময় শুরু হয়ে যায়। এর মাঝখানে কোনো বিরতী নেই। সূর্য অস্থ যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আসরের সময় থাকে। তবে সূর্য ডুবার ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত উত্তম সময়। । (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৫)


✓ আসরের মাকরূহ সময়
সূর্য অস্থ যাওয়ার ১৫ মি. আগ থেকে মাকরূহ সময় শুরু হয়ে যায়। এই সময় নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাকরূহ হবে। ইচ্ছা করে এই সময়ে নামায পড়লে গুনাহ হবে। আর যদি এমন হয় যে, কেউ ঐ দিনের আসরের নামায আদায় করেনি ইতিমধ্যে সূর্য ডুবে যাচ্ছে তাহলে তাকে ঐ সময়ই আসর পড়তে হবে। কিন্তু এটা মাকরূহে তাহরীমা হবে। তবে ফরজের দায় আদায় হয়ে যাবে। । (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩৫)


✓ আসরের সর্বোত্তম সময়
আসর সবসময় দেরি করে পড়া ভালো। কেননা আসরের পরে কোনো নফল পড়া যায় না। সুতরাং সময় হওয়ার প্রায় আধাঘণ্টা বা পোনে এক ঘণ্টা পরে আসর নামায পড়বে। যাতে আসরের আগে বেশি করে নফল নামায পড়া যায়। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৯)


✓ মাগরিব নামাযের সঠিক সময়
বেলা সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিব নামাযের সময় এবং ইফতারের সময় শুরু হয়ে যায়। (ইফতার দেরি করে করা মাকরূহ) মাগরিবের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে আযান ইকামাত দিয়ে নামায আদায় করা উত্তম। পশ্চিম আকাশে বেশ কিছু সময় লালিমা থাকে, এই লালিমা শেষ হওয়ার পর একটু সাদা ভাব হয়। 


সাদা ভাব শেষ হওয়ার পর আকাশ কালো হতে শুরু করে। আকাশ কালো হওয়ার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সময় থাকে। অর্থাৎ আকাশের অবস্থা যতক্ষণ লাল ও সাদা মিশ্রিত থাকে ততক্ষণ মাগরিবের সময় থাকে। মাগরিবের সময় প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। আমাদের দেশের অনেকে মনে করে মাগরিবের সময় ১৫-২০ মি. থাকে। 


যার কারণে এই সময়ের ভেতর মাগরিব পড়তে না পারলে আর পড়ে না। মনে করে কাযা যখন হয়ে গেল তখন পরে এক সময় পড়ে নিব। অথচ সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে নামায পড়লেও আদায় হয়ে যাবে। কোনো ইমামের মতে লাল শেষ হয়ে সাদা শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। আমাদের হানাফী মাযহাবে এ মতের উপর ফাতাওয়া নয়। তাই একান্ত ঠেকা ছাড়া ঐ সময়ে ইশা না পড়া ভালো।
(আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৫-২৬)


✓ মাগরিব নামাযের উত্তম সময়
মাগরিব নামায সময় হওয়ার সাথে সাথে পড়া উত্তম। কিন্তু রমযান মাসে একটু দেরি করে পড়তে বলা হয়েছে। যাতে আগে ইফতার করে নেয়া যায়। কারণ আগে ইফতার করতে পারলে নামায প্রশান্তির সাথে পড়া যায়। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩১


✓ ইশা'র নামাযের সঠিক সময় 
মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইশার সময় শুরু হয়ে যায়। ইশার সময় ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে। তথা সাহরীর সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে। (আল বাহরুর রায়েক ১/)


✓ ইশা'র উত্তম সময়
রাতের এক তৃতীয়াংশের শেষের দিকে ইশা পড়া উত্তম। অর্থাৎ ইশার সময় শুরু হওয়ার সোয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে ইশা পড়া উত্তম। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩০)


✓ ইশা'র মাকরূহ সময়
বিশেষ কোনো অপারগতা ছাড়া মধ্য রাতের পরে ইশা পড়া মাকরূহ। রুগীর সেবা অপারগতার মধ্যে গণ্য হতে পারে কিন্তু ওয়ায মাহফিল অপারগতার মধ্যে গণ্য হবে না। তাই ওয়ায মাহফিলেও যথা সময়ে ইশার নামায আদায় করা জরুরী। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩১)


✓ ফজর নামাযের সঠিক সময় 
সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ফজরের সম থাকে। পূর্ব আকাশের উত্তর-দক্ষিণে যখন সাদা একটা আলো ছড়ায়, তখন ফজরের সময় হয়। সূর্যের কিনারা দেখা পর্যন্ত ফজরের সময় থাকে। ফজরের সময়ের মধ্যেও মাগরিবের মতো আকাশ সাদা ও লাল হয়। ফজরে প্রথমে আকাশ সাদা হয় তারপর লাল হয় আর মাগরিবে প্রথমে লাল হয় এরপর সাদা হয়। ফজরের সময়ও প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৩)


✓ ফজর নামাযের উত্তম সময়
ফজরের সময় আলো উত্তর-দক্ষিণে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ফজর পড়তে বলেছেন। এ সময় ফজর পড়া উত্তম এবং বেশি সাওয়াব লাভের কারণ। কিন্তু রমযান মাসে আগে আগেই ফজর পড়ার মধ্যে বেশি সাওয়াব। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৮-২৯)


No comments

Powered by Blogger.