শিঙ্গা লাগানোর উপকারিতা এবং ইসলামের বিধি বিধান

benefits-planting-horns



1. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি মেরাজের রাত্রে ফেরেশতাদের যে দলেরই নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছি সকলেই বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মতকে শিঙ্গা লাগানোর হুকুম করুন।  (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৯)


2. হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, খালি পেটে শিঙ্গা লাগানো শরীরের জন্য খুবই ফলপ্রসূ, তা জ্ঞান ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ৩৪৮৮)


3. হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা যেসব জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো শিঙ্গা লাগানো এবং কুস্তে বাহরী। (সহীহ বুখারীঃ ৫৬৯৬, মুসলিমঃ ১৫৭৭) কুস্তে বাহরী এক জাতীয় সাদা কাঠ বিশেষ। বিভিন্ন রোগে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতে এটা সাদা চন্দন।


উপরের তিনটি হাদিস থেকে খুব সহজেই বোঝা যায় যে শিঙ্গা লাগানো ইসলামের বিধিতে কোনো বিরোধ নেই এবং এটি স্বাস্থের জন্য উপকারী। আরবিতে এটিকে "হিজামা বলা হয় এবং বর্তমান সময়ে এটিকে কাপিং থেরাপি বলা হয়। কাপিং থেরাপির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। অন্তত তিন হাজার বছর ধরে এশিয়ায় চীনা পদ্ধতিতে শরীরের ওপর কাচের কাপ দিয়ে দেওয়া এই প্রাকৃতিক থেরাপি প্রচলিত আছে। 


শিঙ্গা লাগানোর উপকারিতা
1. হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শিঙ্গা লাগানেওয়ালা কতোইনা উত্তম বান্দা! সে দূষিত রক্ত বের করে, মেরুদন্ডকে আরাম পৌঁছায় এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়। 
(জামে তিরমিযীঃ ২০৫৩, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৮)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর তিনটি উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়, 
✓ দূষিত রক্ত বের করে
✓ মেরুদন্ডকে আরাম পৌঁছায়
✓ চোখের জ্যোতি বাড়ায়।


2. হযরত নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেমা সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি তাকে শিঙ্গা লাগাতে বলতেন। (সুনানে আবূ দাউদঃ৩৮৫৮)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর আরো একটি উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়, তা হলো 
✓ মাথা ব্যথা। 

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে শিঙ্গা লাগানোর উপকারিতা চারটি,
✓ দূষিত রক্ত বের করে
✓ মেরুদন্ডকে আরাম পৌঁছায়
✓ চোখের জ্যোতি বাড়ায়
✓ মাথা ব্যথা। 
তবে শিঙ্গা লাগানোর আরো অনেক উপকার রয়েছে, যা বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে আজ প্রমাণিত। যেমন,
✓ কোমরে ব্যথা, 
✓ স্মৃতিশক্তিহীনতা, 
✓ ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, 
✓ অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, 
✓ অণ্ডকোষ ফোলা
✓ ব্যাকপেইন, 
✓ উচ্চ রক্তচাপ, 
✓ পায়ে ব্যথা, 
✓ হাঁটুর ব্যথা, 
✓ মাথাব্যথা (মাইগ্রেন)


শিঙ্গা লাগানোর স্থান
1. হযরত আবূ কাবশা আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মাথায় এবং উভয় কাঁধের মাঝখানে শিঙ্গা লাগাতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি এসব (স্থান থেকে) দূষিত রক্ত বের করে দেয়, তার জন্য অন্য কিছু দ্বারা কোন রোগের চিকিৎসা না করলেও কোন ক্ষতি হবেনা। 
(সুনানে আবু দাউদঃ৩৮৫৯)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর দুটি স্থান পাওয়া যায়, 
✓ মাথায়
✓ উভয় কাঁধের মাঝখানে।


2. হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে এবং উভয় কাঁধের মাঝখানে শিঙ্গা লাগাতেন। (জামে তিরমিযীঃ ২০৫১)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর দুটি স্থান পাওয়া যায়, তবে এখানকার একটি উপকারিতা সম্পর্কে উপরের হাদীসেও এসেছে, তা হলে এখানে নতুন করে একটি শিঙ্গা লাগানোর স্থান পাওয়া যায়, তা হলো 
✓ ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে।


3. হযরত যাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিতম্বে ব্যথা হওয়ার কারণে নিতম্বে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৩৮৬৩)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর আরো একটি স্থান পাওয়া যায়,
✓ নিতম্বে ব্যথা হওয়ার কারণে নিতম্বে শিঙ্গা লাগিয়েছেন।


সুতরাং উপরোক্ত হাদীস গুলোতে শিঙ্গা লাগানোর চারটি স্থান পাওয়া যায়।
✓ মাথায়
✓ উভয় কাঁধের মাঝখানে
✓ ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে
✓ নিতম্বে ব্যথা হওয়ার কারণে নিতম্বে শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
তবে ঘাড়ের দুপাশের উভয় রগে শিঙ্গা লাগানো মাথা ও তার সাথের অঙ্গসমূহ চেহারা, দাঁত, নাক, চোখ ও কানের রোগসমূহ আরোগ্য লাভ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

মাথায় বা মাথার পিছনের অংশে শিঙ্গা লাগানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তাই রক্তের চাপ বেশি হলে বা মাথা ব্যথা হলেই কেবল মাথায় শিঙ্গা লাগাবেন। বিনা প্রয়োজনে মাথায় শিঙ্গা লাগানো যাবে না, এতে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশংকা আছে। (যাদূল মাআদ ৪/৫৩)


No comments

Powered by Blogger.