কবীরা গুনাহ সমূহের বিবরণ এবং মাফের উপায়



Kabira describes the sins and means of forgiveness



কবিরা গুনাহ'এর আভিধানিক এবং পারিভাষিক অর্থ
কাবিরাহ্ শব্দের শাব্দিক অর্থ বড় আর গুনাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ পাপ, কবিরা গুনাহ'এর শাব্দিক অর্থ হলো বড় পাপ বা বড় পাপের কাজ।
আর শারী’আতের পরিভাষায় কাবিরা গুনাহ বলা হয়, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যে সকল কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং সে সকল কাজের জন্য শাস্তির বিধান অথবা আল্লাহর রাগের কথা ঘোষণা রয়েছে, তাকে কাবীরা গুনাহ বলা হয়। কারো কারো মতে, সেসব আদেশ-নিষেধের লঙ্ঘনে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি বা নির্দিষ্ট আজাবের সাবধানবাণী রয়েছে। এই সব কাজ হারাম।



কাবীরাহ্ গুনাহ 'এর কিছু রুপ
কাবীরাহ্ গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না এবং একটি গুনাহ-ই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতেই হবে। ঈমান আমল নিয়ে পরকালের সুখ শান্তি কামনাই সকল মুসলমানের উদ্দেশ্য।
✓ শিরক করা
✓ মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া
✓ পেশাব করে পানি না নেয়া বা পবিত্রতা অর্জন না করা
✓ আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিন্ন করা
✓ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করা
✓ যিনা করা
✓ চুরি করা
✓ জনগন যাকে চায়না সে ব্যক্তি বাদশাহী বা নেতৃত্ব করা
✓ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা
✓ নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখা
✓ মিথ্যা অপবাদ লাগানো
✓ দুর্নাম বা কারো প্রতি খারাপ ধারণা রাখা
✓ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া
✓ ইলমে দ্বীনকে তুচ্ছ মনে করে অর্জন না করা
✓ যাদু করা
✓ বিনা প্রয়োজনে জনসম্মুখে সতর খোলা
✓ অঙ্গীকার ভঙ্গ করা
✓ মেহমানের খাতির, আদর যত্ন ও অর্ভ্যথনা না করা
✓ আমানতের খিয়ানত করা
✓ সমকামিতা করা
✓ গীবত করা।


গুনাহ'এর প্রকারভেদ 
গুনাহ দু’ভাগে বিভক্ত- 
১. প্রথমত কাবীরা গুনাহ 
২. দ্বিতীয়ত সাগীরা গুনাহ 
তবে কেউ কেউ বলেছেন, মূলত সব গুনাহই- গুনাহ,এর কোন প্রকারভেদ নেই, গুনাহ গুনাহ‌ই, চাই সেটা ছোট হোক আর বড় হোক। তবে মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামের মতে গুনাহ দু’প্রকার। 



✓ নির্বাচনের নামে স্বজনপ্রীতি করা
✓ অন্যায়ের সমর্থন করা 
✓ নেশাযুক্ত জিনিস পান করা
✓ ইসলামী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী হওয়া
✓ জুয়া খেলা ও লটারী ধরা
✓ জনগনের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য দ্রব্য গুদাম করা
✓ সুদ খাওয়া
✓ অসৎ কাজ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাঁধা না দেয়া
✓ ঘুষ খাওয়া
✓ শুকরের গোশত খাওয়া
✓ আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা
✓ অনাথ এতিম, বিধবা মহিলার সম্পদ খাওয়া
✓ স্ত্রী সহবাস করে গোসল না করা।


✓ আত্মহত্যা করা 
✓ মিথ্যা কসম খাওয়া
✓ নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম, নখ বর্ধিত করে রাখা
✓ জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা
✓ জোর-জুলুম করে অর্থ সম্পদ লুটে নেওয়া
✓ ধোঁকা দেওয়া
✓ অহংকার করা
✓ তামাশা দেখার জন্য ষাড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদির লড়াইয়ের আয়োজন করা
✓ বাদ্য বাজনাসহ নাচ-গান করা
✓ ডাকাতি করা, লুণ্ঠন করা
✓ কোন জীব জীবন্তকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা
✓ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশা হওয়া।


✓ জায়গা জমির সীমানা নষ্ট করা
✓ শ্রমিকের মজুরী কম দেওয়া
✓ হালাল প্রানিকে আল্লাাহর নাম ছাড়া জবাই করা বা ভিন্ন উপায়ে মেরে খাওয়া
✓ মাপে কম দেওয়া
✓ অপচয় ও অপব্যয় করা
✓ দ্রব্য সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা
✓ খরিদ্দারকে ধোঁকা দেওয়া
✓ কৃপণতা করা
✓ গোঁফ বড় করে রাখা
✓ তুচ্ছ-তাচ্ছিলের সহিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে কাউকে ডাকা
✓ সিনেমা-টিভি ইত্যাদি দেখা
✓ পাড়া-প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া
✓ অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো
✓ চোখলখুরি করা ও কুটনামী করা।


কাবীরাহ্ গুনাহ মাফের উপায় 
মূলত একনিষ্ঠ তাওবাহর মাধ্যমে সকল গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁহার একনিষ্ঠ বান্দাদের ক্ষমা করে দেন, তবে এ জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যেমন, 
১. আন্তরিকভাবে খালিস নিয়্যতের সহিত অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া
২. ভবিষ্যতে আর ঐ গুনাহ না করার ওয়াদাহ করা
৩. অবিলম্বে উক্ত গুনাহ একেবারেই ত্যাগ করা
৪. গুনাহর সাথে মানুষের অধিকার জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি জীবিত থাকে তবে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে বা তার উত্তরাধিকারীদেরকে সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া। এই চারটি শর্ত পালনপূর্বক ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


✓ গণকের কাছে যাওয়া
✓ মানুষ বা জীবের ফটো ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো
✓ বিদ‘আত কাজ করা বা জারি করা
✓ পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা
✓ অভিশাপ দেওয়া
✓ পুরুষের জন্য জামা-পায়াজামা, লুঙ্গি প্যান্ট টাখনুর নীচে পরিধান করা
✓ গুনাহের কাজে মান্নত করা
✓ প্রজাদের অধিকার খর্ব করা, জনগনের হক আদায় না করা
✓ ঝগড়া-বিবাদে মিথ্যা মুকাদ্দামা দায়ের করা
✓ রামাযানের কোন রোযা ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা
✓ কাউকে ধোঁকা দেওয়া
✓ দু-মুখো স্বভাব অবলম্বন করা।


✓ নর হয়ে নারীর এবং নারী হয়ে নরের বেশ-ভূষা অবলম্বন করা
✓ টাকা বা নোট জাল করা
✓ হস্ত মৈথুন করা
✓ কৃত্রিম চুল ব্যবহার করা, এটা একধরনের প্রতারণার শামিল 
✓ অহেতুক কুকুর পালন করা
✓ ঋতুস্রাব থাকা অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করা
✓ যাকাত না দেয়া
✓ একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা না রাখা
✓ ইচ্ছা করে কোন নামায কাযা করা 
✓ ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা
✓ হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষন করা
✓ খতনা না করা
✓ রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নীচে পায়খানা করা।   


কাবীরাহ্ গুনাহ 'এর শাস্তি 
কবিরা গুনাহের শাস্তির বিষয়ে পবিত্র কোরআনে যেসব স্থানে জাহান্নামে ‘চিরস্থায়ীভাবে’ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর বিপরীত বিবরণও কোরআন-সুন্নাহতে বিদ্যমান থাকায় মুজতাহিদগণ বলেছেন, ‘চিরস্থায়ীভাবে’ অর্থ হবে দীর্ঘকাল; অনন্তকাল নয়। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)।  



No comments

Powered by Blogger.