কারবালার করুন ইতিহাস

কারবালার করুন ইতিহাস 



Islamic history and glory



ইরাকের ফোরাত নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত কারবালা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। এই জনপদ প্রসিদ্ধিলাভ করেছে জান্নাতে যুবকদের নেতা, প্রিয় নবী (সা:)-এর প্রিয় নাতি এবং জান্নাতে নারীদের নেত্রী হজরত ফাতেমাতুজ জেহারা (রা:)-এর দ্বিতীয় পুত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সপরিবারে শাহাদতের মর্মান্তিক ঘটনাকে স্মরণের জন্য।

■ কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা________ 
বিশ বছর খলিফা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার পর হিজরির ৬০ সালে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচণায় মুয়াবিয়া তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে মনোয়ন দিয়ে যান। এই নিয়োগ ইসলামের গণতান্ত্রিক নিয়মের পুরোপুরি বহির্ভূত ছিল। ইয়াজিদ ছিলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির, মদ্যপ, ধর্মে অবিশ্বাসী এক ব্যক্তি। যার কারণে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এটিকে ভালোভাবে মেনে নেয়নি।

পক্ষান্তরে মদিনা ও কুফার জনগণ ইমাম হোসাইন (রা.) কে খলিফা হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এরই এক সময় কুফার লক্ষাধিক মানুষ ইমাম হোসাইন (রা.) কে পত্র প্রেরণ করেন। এই পত্রে তারা দাবি জানান, সুন্নাহ পুনর্জীবিত এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে অবিলম্বে তার দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রয়োজন।

যদিও এ সময় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইরাক থেকে চলে গিয়ে মক্কা-মদিনায় অবস্থান করছিলেন। মদিনায় অবস্থানরত সাহাবিগণ এবং ইমাম হোসাইনের আপনজনরা এ সময় ইমামকে কুফায় যেতে বারণ করেন। কারণ তারা আশঙ্কা করছিলেন, ইয়াজিদের পক্ষ থেকে বাধা আসলে ইরাকবাসীরা ইমাম হোসাইনের পক্ষ ত্যাগ করবে।

কুফাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে হযরত হোসাইন (রা.) তার চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে ইরাকের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠান। আর বলে দেন, যদি সে পরিস্থিতি অনুকূল দেখে এবং ইরাকবাসীদের অন্তর সুদৃঢ় ও সুসংহত মনে হয় তাহলে যেন তাঁর কাছে দূত প্রেরণ করে।
মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ১৮ হাজার কুফাবাসী তার কাছে এসে ইমাম হোসাইনের পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করে এবং তারা শপথ করে বলে, অবশ্যই আমরা জানমাল দিয়ে ইমাম হোসাইনকে সাহায্য করব।

তখন মুসলিম ইবনে আকিল ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাছে পত্র পাঠিয়ে জানান যে, কুফার পরিস্থিতি সন্তোষজনক, তিনি যেন আগমন করেন। এই সংবাদের ভিত্তিতে ইমাম হোসাইন (রা.) তার পরিবারের ১৯ জন সদস্যসহ প্রায় ৫০ জন সঙ্গী নিয়ে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হোসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন।

এই খবরে ইয়াজিদ উত্তেজিত হয়ে কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশিরকে (রা.) পদচ্যুত করে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফার দায়িত্ব প্রদান করেন। ইমাম হোসাইন (রা.) যেন কোনোভাবেই কুফায় প্রবেশ করতে না পারে সে নির্দেশও দেন ইয়াজিদ।ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ কুফায় পৌঁছে সেখানকার জনগণকে কঠোর হস্তে দমন করে এবং মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করে। এরপর ইমাম হোসাইনকে (রা.) প্রতিরোধ করতে চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করে।
পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে ইমান হোসাইন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে পৌঁছালে ইবনে জিয়াদের বাহিনী তাদের অবরোধ করে ফেলে।

এ সময় হোসাইন (রা.) বললেন, আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি। তোমরা আমাকে ডেকেছ বলে আমি এসেছি। এখন তোমরা কুফাবাসীরাই তোমাদের বাইয়াত পরিত্যাগ করছ। তাহলে আমাদের যেতে দাও, আমরা মদিনায় ফিরে যাই অথবা সীমান্তে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অন্যথায় ইয়াজিদের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করি। কিন্তু হযরত হোসাইন (রা.) কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দেয় ইবনে জিয়াদ। ঘৃণা ভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন ইমাম হোসাইন (রা.)।

মহররমের ১০ তারিখ সকাল থেকে ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ হাজার ইয়াজিদ বাহিনী হোসাইন (রা.)-এর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। হোসাইন (রা.) সাথীদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। এই যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া পরিবারের শিশু, কিশোর ও নারীসহ সবাই একে একে শাহাদাতের বরণ করেন।মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইমাম হোসাইন একাই লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে ইমাম হোসাইনকে শহীদ করা হয়। শিমার বিন যুল জাওশান নামক এক পাপিষ্ঠ তার মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

শাহাদাতের পর ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে এবং তাঁর পরিবারের জীবিত সদস্যদের দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে প্রেরণ করা হয়। ইমামের খণ্ডিত মস্তক দেখে ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে।

ইয়াজিদের এই জয়লাভ বেশি দিন টিকে থাকেনি। মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যু হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে মৃত্যু হয় ইয়াজিদ পুত্রের। কারবালার এই মর্মান্তিক হত্যায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক বছরের মধ্যেই মুখতার সাকাফির বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। এরপর ইয়াজিদের বংশের কেউ শাসন ক্ষমতা লাভ করেনি।

THANK YOU ALL 

A N I _______


No comments

Powered by Blogger.