গীবত করা হারাম । পরনীন্দা ভয়াবহ পাপ ।




A N I
ANWAR NURUL ISLAM
THE ISLAMIC KNOWLEDGE AND SKILLS
গীবত করা হারাম । পরনীন্দা ভয়াবহ পাপ ।


■ গীবত করা হারাম । 
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, অনুপস্থিত, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনও ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মু’জামুল ওয়াসিত)

■ হাদীসের আলোকে ।
গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনও ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)

অত:এব কেউ যদি আপনাকে কষ্ট দেয় আর আপনি তা যদি এমন ব্যক্তির সামনে পেশ করেন, যে তার বিচার করবে বা এ বিষয়ে দুজনের মধ্যে সমাধান করবে  বা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে তাহলে তা গীবতের পর্যায়ে পড়বে না। অন্যথায় গীবত হিসেবে পরিগণিত হবে।


■ গীবত এর ভয়াবহতা ।
গীবত বা অসাক্ষাতে মানুষের দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন,

وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)

সুস্থ, স্বাধীন কোনও বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায় নিমজ্জিত হয়।

■ সামাজিক প্রতিফলন ।
গীবত সামাজিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে দেয়। মানুষের মাঝ থেকে ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক নষ্ট হয়। শুরু হয় মানুষে মানুষে অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা এবং সকল ক্ষেত্রে চরম বিশৃংখলা। এটি একটি সামাজিক ক্যান্সারের মত। সমাজ দেহে  কোন এক স্থানে এর সূচনা হলে আস্তে আস্তে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এহেন বিশৃংখ অবস্থা বিরজমান হওয়ার জন্য এই অপরাধটি অন্যতম কারণ।
তাই গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।

■ যে সকল ক্ষেত্রে অনুপস্থিতে দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা
গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয় |
ইমাম নববী (রহ:) বলেন, ”সৎ ও শরীয়ত সম্মত উদ্দেশ্য সাধন যদি গীবত ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে এক্ষেত্রে গীবত জায়েয।” তার মতে ছয় ধরণের গীবত জায়েয।
【1】 মজলুম ব্যক্তি জালেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে।
【2】 ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোন ব্যক্তির দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।
【3】 মুফতির নিকট মাসয়ালা জানতে গিয়ে প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির (সম্ভব হলে নাম উল্লেখ না করে) ত্রুটি বলা যায়।
【4】 কোন ব্যক্তি কারো সাথে বিয়ে বা ব্যবসায়ের সম্পর্ক করতে চাইলে এবং তার সম্পর্কে অন্য ব্যক্তির সাথে পরামর্শ চাইলে তার দোষ-গুণ স্পষ্টভাবে বলে দেবে যা সে জানে (মনে হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে)।
【5】 যে সব লোক সমাজে প্রকাশ্যে পাপ কাজ, বিদয়াত বা গোমরাহির প্রসার ঘটাচ্ছে, তাদের দোষ-ত্রুটির তীব্র সমালোচনা জায়েয।
【6】 চেনার উদ্দেশ্যে কাউকে ছদ্মনাম বা খারাপ উপনামে ডাকা জায়েয (তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়)।

THANK YOU ALL
A N I.

No comments

Powered by Blogger.