শূলী, যন্ত্রণাদ্বায়ক এক মৃত্যুর নাম

THE IMPALES | শূলী । যন্ত্রণাদ্বায়ক এক মৃত্যুর নাম ।



A N I
2 MARCH 2020
THE IMPALES | শূলী । যন্ত্রণাদ্বায়ক এক মৃত্যুর নাম ।


একটি সুচালো দণ্ড বা খুঁটিকে দেহের বিভিন্ন ছিদ্রপথে বিশেষ করে পায়ুপথে প্রবেশ করানো হতো। তারপর খুঁটিটিকে মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হতো। একসময় সুচালো অংশটি অপরাধীর শরীর ভেদ করে বুক অথবা ঘাড় দিয়ে বের হয়ে যেত। অপরাধী ব্যক্তিটি এভাবে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না করে ভোঁতা রাখা হত যাতে হৃৎপিণ্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি মারা না যায়। এতে অপরাধী বেশি কষ্ট পেত। কেননা মারা যেতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি একদিন সময়ও লাগত। শূলে চড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি কুখ্যাত ছিল প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ওয়ালেশিয়া রাজ্যের যুবরাজ তৃতীয় ভ্লাদ যাকে বলা হয় ড্রাকুলা।

তৎকালীন তুরস্কে এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। তুর্কিদের হাতে একবার আটক হওয়ার সময় তৃতীয় ভ্লাদ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এ পদ্ধতিটি শিখে নেয়। ড্রাকুলা যুদ্ধবন্দি ও রাজদ্রোহীদের শূলে চড়াত সাধারণ প্রজাদের সম্মুখে যাতে তারা ড্রাকুলাকে ভয় পায়। তার শত্রুদের জন্যও এটা ছিল তার ভয়াবহতার ইঙ্গিত। তবে ড্রাকুলার শূলে চড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভিন্নতর। পেট অথবা পিঠের মধ্য দিয়ে সুচালো কোনো দণ্ড ঢুকিয়ে দিয়ে তা মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হতো। এভাবে একসঙ্গে অনেক মানুষকে শূলে চড়িয়েছেন ড্রাকুলা। কুখ্যাত ড্রাকুলাকে নিয়ে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। কিছু কিছু সিনেমায় শূলে চড়ানোকে ভ্যাম্পায়ারদের হত্যা করার পদ্ধতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ভয়ানক শাস্তি হিসেবেই দেখা হয় শূলে চড়ানোকে। আগে কোনো অপরাধীকে ধারালো বাঁশ বা বর্শার মাথায় বসিয়ে দেওয়া হতো। নিজের ওজনেই হতভাগ্য মানুষটি নিচে নেমে যেত। দেহ এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে যেত তীক্ষ বর্শা। বীভৎস শাস্তিটি মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি হিসেবে আমাদের এই উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের নানা অঞ্চলে ছিল বিখ্যাত। ব্রাম স্টোকার ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’ যার চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন, সেই রোমানীয় শাসক ভ্লাদ দি ইমপেলার বিশেষ কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন অসংখ্য মানুষকে শূলে চড়িয়ে।

গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে জাদুকররা এই শূলে চড়ানোটাকে রীতিমতো ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলল। মঞ্চে প্রথমে একটা ধারালো তলোয়ার খাড়াভাবে আটকানোর ব্যবস্থা করা হতো। এরপর জাদুকরকে তার সহকারীরা ধরাধরি করে বসিয়ে দিত তলোয়ারের ওপর। জাদুকর বেচারা তীক্ষ তরবারিতে গেঁথে যেতে বেশি সময় নিত না। কিন্তু এখানেই ঘটনার শেষ হতো না।

খানিক পরেই বিস্মিত দর্শক দেখত ‘প্রাণহীন’ জাদুকর তরবারিবিদ্ধ অবস্থায়ই নড়াচড়া করছে। পরে সহযোগীদের সাহায্যে বহাল তবিয়তে নেমে আসতেন। দেহের কোথাও একটা আঁচড় পর্যন্ত লাগত না। পরে এই জাদুর আরো এক সংষ্করণ জনপ্রিয় হয়। জাদুকরকে চিত করে শুইয়ে দেওয়া হতো সুচলো দণ্ডের ওপর। দর্শকদের সামনে দণ্ডের সম্মুখভাগ জাদুকরের শরীর ভেদ করে ওপরের দিকে বের হয়ে আসত। দুটি পদ্ধতিই বেশ রোমাঞ্চকর হওয়ায় এ জাদু কাছে পেয়ে যায় ভীষণ জনপ্রিয়তা।


কিন্তু কিভাবে একজন মানুষ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাওয়ার পরও দিব্যি সুস্থ থাকছেন? জাদু বিশেষজ্ঞ হার্বাট বেকার এই জাদুর কৌশল নিয়ে একটা ধারণা দেন। তাঁর মতে, জাদুকরকে তীক্ষ তলোয়ারের ওপর বসানো হলেও, আসলে তা করা হয় না। জাদুকরের পোশাকের নিচে থাকে আরেকটি পোশাক, তলোয়ারের ডগা ওই পোশাকের সঙ্গে গেঁথে থাকে, আর জাদুকরের দেহ ভেদ করে তলোয়ারের যে অগ্রভাগ উঠে আসে, তা ওই পোশাকের সঙ্গে স্প্রিং দিয়ে চেপে রাখা রবারের তৈরি নকল অগ্রভাগ। পুরোটা ঘটে জাদুকরের পেছনে, কাজেই দর্শক কিছুই টের পায় না।


এ তো গেল বসা অবস্থায় শূলবিদ্ধ হওয়ার রহস্য। এর অপর ভার্সনটিতে জাদুকরকে শূলের ওপর শুইয়ে দেওয়া হয়। আসলে কিন্তু শূলের ডগাটি খুবই নরম কোনো রাবারে তৈরি। জাদুকরের  পোশাকের সামনের অংশে বিশেষভাবে আরেকটি রাবারের শূলের অগ্রভাগ চেপে রাখা থাকে। স্প্রিংয়ের সাহায্যে শূলের নিচের অংশের দৈর্ঘ্য হঠাৎ করে কমিয়ে আনা হয়, জাদুকর বেশ কিছুটা নেমে আসেন এবং নিজের শরীরের সামনের অংশে চেপে রাখা শূলটিকে মুক্ত করে দেন। ফলে দর্শকরা দেখতে পান একজন জীবিত মানুষ শূলবিদ্ধ হয়ে গেল। তবে এই কসরত দেখানো বেশ কঠিন। জাদুকরের গোটা দেহ ভর করে থাকে একটি দণ্ডের ওপর, কাজেই শারীরিকভাবে বেশ সমর্থ না হলে অথবা জাদুর সরঞ্জাম মজবুত না হলে দুর্ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়।

THANK YOU ALL
A N I

No comments

Powered by Blogger.