স‍্যার মীর উসমান আলী খান সিদ্দিকী ।

স‍্যার মীর উসমান আলী খান সিদ্দিকী ।




A N I
7 MARCH 2020
MUSLIM GREAT MAN IN INDIA
স‍্যার মীর উসমান আলী খান সিদ্দিকী ।

◆ স‍্যার মীর উসমান আলী খান সিদ্দিকী ।

যিনি জামা কাপড় ছিঁড়লে নিজের হাতেই সেলাই করতেন, তার টেবিলেই পেপার ওয়েট হিসেবে ব‍্যবহার হতো পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম হীরা । 185 ক‍্যারেটের জ‍্যাকব ডায়মন্ড । বর্তমানে যার মূল্য একহাজার কোটি টাকারো বেশি । পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রোলস রয়েসের পঞ্চশটির‌ও বেশী মডেলের গাড়ী রাখা থাকতো তাঁর গ‍্যারেজে । তার কাছে যত পরিমাণ মুক্তা ছিল, তাতে একটি অলিম্পিক সাইজের সুইমিংপুল ভর্তি হয়ে যেতো । 


জানলে আরো অবাক হবেন এই মানুষটিই রানী এলিজাবেথ এর বিয়েতে কয়েক কোটি টাকা দামের একটি হিরের নেকলেস পাঠিয়ে দেন, যেটি আজও রানীর ব‍্যক্তিগত সংগ্রহ শালায় নিজাম নেকলেস নামে পরিচিত । নেকলেসটি এখন সম্ভবত প্রিন্সেস কেট এর কাছে আছে । এই চুড়ান্ত মিতব্যয়ী লোকটি একসময় ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে ধোনি । অবিভক্ত ভারতের হায়দারাবাদ ও বেরার রাজ‍্যের  শেষ নিজাম ,স‍্যার মীর উসমান আলী খান সিদ্দিকী । রাজ‍্যটি পরাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ‍্য ছিল ।নিজামের শাসনে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ ছিল । আর 82,698 বর্গমাইল ভূখণ্ড ছিল । 


বিশ্বখ্যাত টাইম মেগাজিনের ২২ ফেব্রুয়ারি 1936 সংখ‍্যার কভারে নিজামের ছবি চাপা হয় নিচে ক‍্যপশন ছিল 'the richest man in the world' । তার চেহারা এবং জামা কাপড় এবং গোফ দেখে এক ঝলকেই মনে হতো রাজা রসূয়ের বাবুর্চি । কিন্তু এই বেটে খাট মানুষটিই অবিশ্বাস্য পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিল । 1930 থেকে 1960 সাল অব্দি তাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব‍্যক্তি হিসেবে ধরা হতো । নিজাম হায়দারাবাদকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন । যার নাম দিয়েছেন উসমানীস্থান । তিনি পাকিস্তান বা বাংলাদেশ কারো সাথে না যেয়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলেন ।


■ এবার জেনে নিন এই মানুষটি ভারতের জন্য কি করে গেছেন।
অনেকেরই অপছন্দের এই লোকটি ভারতের জন্য যা করে গেছেন তা আজও কেউ করতে পারেননি । তখন 1965 সাল  ভারতকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে চিন । সঙ্গে পেয়েছে দোসর পাকিস্তানকে , দেশকে বহিরাগত শত্রু থেকে বাচাতে গঠন করা হলো জাতীয় নিরাপত্তা তহবিল । ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হায়দারাবাদ গিয়ে নিজামকে জাতীয় নিরাপত্তা তহবিলে দান করার জন্য অনুরোধ করলেন । সব শুনে নিজাম মিটিমিটি হাসতে হাসতে  নিজের সেক্রেটারি জেনারেল কে ডাকলেন । একটা কাগজে কিছু একটা লিখে দিলেন । সেক্রেটারি কাগজটা তুলেই চমকে উঠলেন । ভারতের নিরাপত্তা তহবিলে নিজাম উসমান আলী দিলেন শ্রেষ্ঠ দান , দেখলেন পুরো পৃথিবী । সামান‍্যই দিলেন তার খাজানা থেকে । মাত্র পাঁচ টন স্বর্ণ । এর সঙ্গে দিলেন নগদ 75 লক্ষ টাকা । ভারতের জাতীয় কোষাগারে দান হিসেবে দেওয়া সবচেয়ে বড় অর্থরাশি । এত টাটা , বিরলা, আম্বানি , আদানি  মিত্তাল এলেন ও গেলেন কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ব‍্যক্তি তো বটেই কোন প্রতিষ্ঠানও এত পরিমাণ সম্পদ ভারতে এসে দান করার সৎসাহস দেখাতে পারেনি । এই মানুষটি তার বার্ষিক বাজেটের 11% শিক্ষা খাতে ব‍্যয় করতেন ।প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল এবং গরীবদের জন্য বিনাখরচে শিক্ষার ব‍্যবস্থাও ছিল । ভারত ও বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশাল অংকের টাকা অনুদান হিসেবে পাঠাতেন । এর মধ্যে জামিয়া নিজামীয়া,দারুল উলুম দেওবন্দ, আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, এমনকি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিও ছিল । 1932 সাল bhandarkar oriental research institute এর মহাভারত পুস্তক প্রকাশের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল ,তাদের অনুরোধে নিজাম সেখানেও প্রচুর অর্থ দান করেন । পরে কর্তৃপক্ষ তার স্বরণে nizam guest house নামে একটি ভবন নির্মাণ করেন ।তার তৈরী করা ওসমানীয়া ইউনিভার্সিটি আজো ভারতের অন‍্যতম বড় ইউনিভার্সিটি । ওসমানীয়া ইউনিভার্সিটির ইউনিফর্ম ছিল শেরওয়ানী । তিনি প্রচুর স্কুল কলেজ অনুবাদ কেন্দ্র নিজের হাতে গড়েছিলেন নিজাম । 



হাড়কাঁপানো শীতে কম্বলের দাম 25 টাকার জায়গায় 35 টাকা হওয়ায় পুরনো কম্বল গায়েই ঘুমিয়েছিলেন । কিন্তু সকালে উঠে দেহরক্ষী বাবদ বিকানীবের মহারাজার একটি অনুরোধ পেলেন, তিনি লিখেছিলেন বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে হিন্দু ছাত্রদের জন্য কিছু সাহায্য করতে হবে, একটুও না ভেবে এক লাখ টাকা বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে পাঠিয়ে দেন ,তখন একলাখ টাকার অনেক মূল্য ছিল । স‍্যার নিজাম উসমান গনী ত‍ৎকালীন ভারতের সব রাজা মহারাজাদের থেকে সবকিছুতেই এগিয়ে ছিলেন ।  আজ দিল্লিতে যে ঐতিহ‍্যশালী হায়দারাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের সাথে দেখা করেন এই হাউসটি নিজামের নিজস্ব অর্থে বানানো । 


তার জামানায় তিনি হায়দারাবাদ শহরে তৈরী করেছিলেন তাক লাগানো কিছু প্রাসাদ । ত‍ৎকালীন হায়দারাবাদ স্টেটের মারাঠা ওয়ারা অঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণার হাতেখড়ি নিজামের হাতেই হয়ে ছিলো । 1941 সালে তিনি নিজেই নিজের ব‍্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন । নাম দেন হায়দারাবাদ স্টেট ব‍্যাঙ্ক । বর্তমানে যার নাম স্টেট ব‍্যাঙ্ক অফ হায়দারাবাদ । ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় হায়দারাবাদ ছিলো একমাত্র স্টেট সেখানে ইংরেজরা নিজস্ব মুদ্রা ব‍্যাবহারের অনুমোদন দেন ‌। তার মুদ্রার নাম ছিল ওসমানীয়া সিক্কা ‌। আর নোটের নাম ছিল হায়দারাবাদী রুপি । স‍্যার নিজামের বিমানের‌ও শখ ছিল ‌। তিনি 1930 সালে হায়দারাবাদ এরোক্লাব এবং বেকমপেট এয়ারপোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন । এই বিমানবন্দর থেকেই ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ব‍্যবসায়িক এয়ারলাইন্স নিজামের ডেকান এয়ারলাইন্সের ন‍্যাশনাল ও ইন্টারনেশনাল প্লাইট গুলি আকাশে উড়েছিল ।



THANK YOU ALL
A N I 

No comments

Powered by Blogger.