ক্যালসিয়াম কি ? প্রতিদিন কতটুকু গ্রহণ করবেন ।


ক্যালসিয়াম কি ? প্রতিদিন কতটুকু গ্রহণ করবেন ।


ক্যালসিয়াম কি ? প্রতিদিন কতটুকু গ্রহণ করবেন 



■ প্রারম্ভিকা ।
তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করা যাবে বটে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশ কিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশি মাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।
বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।


■ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ 10 টি খাবার যা হাড়ের জন্য বেশ উপকারী ।
【1】 কমলা |
সাইট্রাস জাতীয় ফল কমলাতে শুধু ক্যালসিয়ামই নয় ভিটামিন ডি আছে যেগুলো শরীরের হাড় মজবুত করে। তাই প্রতিদিন সকালে নাস্তার সময়ে এক গ্লাস কমলার জুস খেতে পারেন এতে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করবে এবং হাড় মজবুত করবে।
【2】 দুধ |
দুধ সর্বোৎকৃষ্ট ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্যই না এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যও একটি প্রয়োজনীয় খাবার। এটি এমনই একটি খাবার যা দেহে খুব সহজেই জারিত এবং শোষিত হয়ে থাকে যার ফলে শারীরিক বৃদ্ধি এবং হাড় মজবুতে সহায়তা করে থাকে।
【3】 দই |
এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে কিছু স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা হজমে সহায়তা করে। এছাড়া এতে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় মজবুত করে থাকে।
【4】 সবুজ শাক সবজি |
বিভিন্ন প্রকারের সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যেমন ধরুন বিভিন্ন শাক, শালগম, বাধাকপি, লেটুস পাতা, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যেগুলো হাড় গঠনে সহায়তা করে।
【5】 মটরশুটি |
মটরশুটিতেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যেগুল হাড় মজবুত করে। এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির জন্য আপনি বিভিন্ন জাতের মটরশুটি খেতে পারেন।
【6】 বিভিন্ন ঔষধি এবং মসলা |
বিভিন্ন ধরনের ঔষধি অর্থাৎ তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা, দারুচিনি এবং মসলা জাতীয় খাবার যেমন রসুন ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন হাড় মজবুত করে থাকে।
【7】 আলমন্ড |
ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে প্রচুর প্রোটিনও থাকে। এক কাপ আলমন্ড-এ ৪৫৭ গ্রাম এই খনিজটি থাকে। দাঁত ও হাড় শক্ত করার সঙ্গে হৃদরোগ কমায়। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন এক গ্লাস করে আলমন্ড দুধ আপনার জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া কেউ চাইলে রোজ একমুঠো আলমন্ড এমনি খেতে পারেন। এতেও উপকার পাবেন।
【8】 মাছ |
প্রধানত স্যামন ও সার্ডিন জাতীয় মাছে অর্থা সামুদ্রিক মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। বিশেষ করে একটুকরো সার্ডিন মাছে প্রায় ৫৬৯ মিগ্রা ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া, কাঁটা সমেত যে কোনও মাছেই এই মিনারেলস মিলবে।
【9】 সোয়া মিল্ক |
ল্যাকটোজ যাঁদের সহ্য হয় না, তাঁদের জন্য সোয়া মিল্ক খুবই উপকারী। এমনকী গরুর দুধের থেকেও বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে এতে। এক কাপ দুধে প্রায় ৬০ মিগ্রা ক্যালসিয়াম থাকে। আর থাকে ভিটামিন ডি। যা ক্যালসিয়ামকে শরীরের উপকারী যৌগ হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করে।
【10】 ডুমুর |
এই ফলে যেমন আয়রন থাকে প্রচুর তেমনি থাকে ক্যালসিয়াম। এক কাপ ডুমুরে প্রায় ২৪২ গ্রাম ক্যালসিয়াম মেলে। একই সঙ্গে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। পেশী মজবুত করে।


■ দৈনন্দিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন ?
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক 1000 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও 600 ইউনিট ভিটামিন ডি হলে চলে। রজর্নিবৃত্তির (মেনোপজ) পর নারীদের এবং সত্তরোর্ধ্ব পুরুষদের 1200 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয়। গর্ভবতী ও বুকের দুধ পান করান যে মায়েরা তাঁদের লাগে একটু বেশি। ভিটামিন ডি-ও খেতে হবে কেননা এটি শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে এবং দুধজাতীয় খাবার থেকে আসে ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, বাদাম, টফু, কমলা ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।


■ কীভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়েছে ?
কয়েকটি কারণে বিশ্বাস করা হয় যে শক্ত হাড়ের জন্য শুধু শিশুদের দুধ খাওয়া দরকার। প্রাপ্তবয়স্ক অনেকে মনে করেন না যে তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম দরকার। ক্যালসিয়াম শরীরের পক্ষে দরকারি যেহেতু এটা রক্তচাপ কমায় এবং হাড় শক্ত করে।ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় দুগ্ধ জাতিও খাবারে যেমন দুধ, চিজ, দই, সামুদ্রিক খাবারে এবং সবুজ সবজিতে। বর্তমানে আমরা সবাই অস্বাস্থ্যকর খাবার, জাঙ্ক ফুড, পিঁজা, ভাজাভুজি, বার্গার এবং তেলেভাজা নিয়ে মেতে উঠেছি যা পুষ্টি নষ্ট করছে। আমাদের জীবন যাপন বর্জিত করছে সমস্ত রকম শারীরিক কার্যকলাপ, এটাই অন্যতম কারন অস্বাস্থ্যকর জীবনের।ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ প্রস্তাব দিয়েছে যে পুরুষ ও মহিলা সবারই প্রতিদিন 1000 MG করে ক্যালসিয়াম দরকার।ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরে যে মারাত্মক প্রভাব পড়ে বা যে লক্ষণগুলো দেখা তা হলো ।
【1】 পায়ে খেঁচুনি ধরা |
যদি আপনারা আপনাদের পায়ে খেঁচুনি ধরা অনুভব করেন, তাহলে এটা ক্যালসিয়ামের অভাবের প্রথম লক্ষণ।এর প্রতিকারে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার রোজকার খাবারে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাছাড়া, ক্লেভেলান্ড ক্লিনিক বলেছে যে শোওয়ার আগে পা প্রসারিত করুন তাতে ব্যথা কিছু কম লাগবে। এটা কি বিশ্বাস করেন? না করলে একবার চেষ্টা করে দেখুন
【2】 দাঁতের গর্ত |
আগের চেয়ে দাঁতের গর্ত বাড়ছে? শুধু মিষ্টিকে দোষ দেবেন না।যখন আমাদের শরীর খাবার থেকে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম পায় না, এটি অন্যান্য উৎস থেকে খোঁজে, যেমন আমাদের দাঁত।
【3】 অসাড় অবস্থা |
পায়ে খেঁচুনি ধরার মতো ক্যালসিয়ামের অভাবের জন্যে আমাদের হাতের স্প্ল্যাশাল স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়। যদি আপনি আগুলের ওপর অস্থিরতা বা ঝলকানি সংবেদন অনুভব করেন তাহলে এখুনি ক্যালসিয়ামের পরিমাণ পরীক্ষা করান।
【4】 ভঙ্গুর নখ |
দাঁত ও শরীরের মতো নখেও ক্যালসিয়াম থাকে। অতএব, একটি ক্যালসিয়াম-অনাহারী শরীর পুষ্টির জন্য সেখান থেকে ক্যালসিয়াম নেবে। এটার জন্যে আমাদের নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়, যদি না আমরা বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করি।
【5】 ঘুমের অসুবিধা |
মেডিকেল তথ্য আনুসারে ক্যালসিয়াম সেরোটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা কিনা ঘুমের জন্যে দায়ি। যখন আপনি গভীর ঘুমে যান, তখন আপনার ক্যালসিয়ামের লেভেল বেড়ে যায়। সুতরাং যদি আপনি রাতে কম ঘুমান তাহলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব বাড়বে।
【6】 বাজে অঙ্গবিন্যাস |
কম ক্যালসিয়াম মানে, দুর্বল হাড় এবং দুর্বল হাড় মানে দুর্বল শরীর। আপনার শরীর এই দুর্বলতার জন্যে জবুথবু হয়ে যাবে। এই বাজে অঙ্গবিন্যাসের জন্যে পিঠে ও কাঁধে ব্যাথা বাড়বে।
【7】 হৃদরোগের আক্রমণ |
জৈবপ্রযুক্তি জাতীয় কেন্দ্র বলছে যে ক্যালসিয়াম পেশী সংকোচন এবং নিউরোট্রান্সমিটার রিলিজ দরকারি। সুতরাং ক্যালসিয়ামের অভাব হৃদরোগের আক্রমণের কারন হতে পারে।
【8】 স্মৃতিশক্তি হ্রাস |
রিমোট কোথায় মনে করতে পারছেন না? ক্যালসিয়ামের অভাবের জন্যে স্নায়বিক উপসর্গগুলি হয় যেমন স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও ভুলে যাওয়া।

■ শেষমেশ ।
ডাক্তারদের পরামর্শ মোতাবেক পুষ্টিকর খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পড়তে থাকে। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম হাড়ে সঞ্চিত থাকে। বয়স বৃদ্ধি পেলে হাড় পাতলা হয়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এজন্য ক্যালসিয়াম জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। ক্যালসিয়ামের উৎস সম্বলিত খাবার খেয়ে এর অভাব পুরো করা যেতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধার্থ থাকা ও অপুষ্টিতে ভোগা, হরমোন জনিত সমস্যা, অপ্রাপ্ত বয়সে বাচ্চা প্রসব, ক্যালসিয়াম শোষিত না হওয়া অর্থাৎ খাবারে যথাযথ ভিটামিন ও খনিজ থাকলেও তা শরীর কর্তৃক শোষণে ব্যর্থ হওয়া, ইত্যাদি কারণে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়।

THANK YOU ALL

A N I

No comments

Powered by Blogger.