কিডনি সুস্থ রাখার উপায় এবং করণীয়


Kidney tips


কিডনি সুস্থ রাখার উপায় এবং করণীয় 



■ সূচনা বচন ।
মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। এই ধরণের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত। 


■ কিডনি ভালো রাখাতে হলে |
তাই কিডনি ভালো রাখাতে হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আপনার কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়বে।
【1】 ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি একপর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।
【2】 মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
【3】 মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।
【4】 অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
【5】 রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।
【6】 প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
【7】 কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে ওষুধ খাবেন না।
【8】 গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
【9】 খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন।
【10】 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।


উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।


■ কিডনি পরিষ্কার করে যেসব খাবার |
আপনি যা খাবেন তাই আপনার স্বাস্থ্যে প্রতিফলিত হবে এবং আর যেকোনো অঙ্গের মতোই কিডনির সুরক্ষায়ও বিশেষ কিছু খাবার দরকার হয়। স্বাস্থ্যবান হৃদপিণ্ডের মতো একটি স্বাস্থ্যবান কিডনি থাকাটাও জরুরি। কিডনির প্রধান কাজ হলো দেহ থেকে বর্জ্য বের করে দেওয়া এবং ক্ষতিকর টক্সিন বা বিষ অপসারণের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া।
【1】 আপেল ।
প্রচলিত আছে 'প্রতিদিন একটা আপেল খান আর ডাক্তারকে দূরে রাখুন'। কথাটা কিডনির ক্ষেত্রেও সত্য। আপেল উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, এতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি আছে যা বাজে কোলেস্টেরল দূর করে হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আপেল কাঁচা বা রান্না করে অথবা প্রতিদিন এক গ্লাস আপেলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
【2】 রসুন ।
রসুন ইনফ্লেমেটোরি এবং কোলেস্টেরল কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা দেহের প্রদাহ দূর করে থাকে। তবে রান্না করে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় না। ভাল হয় সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া, এটি হার্ট ভাল রাখার পাশাপাশি কিডনিকেও ভাল রাখে।
【3】 সবুজ শাকসবজি ।
নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। বেশিরভাগ শাকসবজিতে ভিটামিন সি, কে, ফাইবার ও ফলিক এসিড থাকে। এগুলো রক্তচাপ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনি জটিলতা কমায়।
【4】 হলুদ ।
এলার্জি থেকে ত্বককে রক্ষা করা ত্বককে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কিডনির রক্ষাও করে হলুদ। নিয়মিত হলুদ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। সেই সঙ্গে কিডনিও পরিষ্কার হয়। এতে থাকা কারকুমিনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান কিডনি রোগ ও পাথর জমা হওয়া রোধ করে।
【5】 ড্যান্ডেলিয়ন ।
এটি হলো একধরনের বন্য হলুদ ফুলের গাছ। এর মূল এবং পাতা শুকিয়ে চা বানিয়ে খেতে হয়। প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায় এবং দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। এ ছাড়া পেটে স্ফীতি কমায়। এটি প্রাকৃতিকভাবে কিডনিকে পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
【6】 অলিভ অয়েল ।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিনের রান্নায় অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে অলিক এসিড, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিড আছে যা কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
【7】 আদা ।
কিডনিকে আরও কার্যকরী করতে আদা খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কিডনিকে ভাল রাখতে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদা কিডনিতে রক্তের চলাচল বাড়িয়ে কিডনিকে সচল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। যদি নিয়মিত কাঁচা আদা, আদার গুড়াা কিংবা জুস করে খাওয়া যায় তাহলে তা কিডনি পরিষ্কারে ভূমিকা রাখে।
【8】 লেবুর শরবত ।
প্রতিদিন লেবু মেশানো জল খেলেও কিডনি পরিষ্কার হয়। লেবুতে যে এসিড উপাদান আছে তা কিডনিতে জমা হওয়া পাথর ভাঙ্গতে বেশ কার্যকর। লেবুতে যে সাইট্রাস উপাদান আছে তা কিডনিতে থাকা ক্রিস্টালদের পরস্পরের জোড়া লাগতে বাধা দেয়।
【9】 ক্যানবেরি জুস ।
চেরির মতো ক্যানবেরিতেও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম। এই দুটি উপাদান কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত ক্যানবেরি জুস খেলে মূত্রথলির সংক্রমণ কমে যায়। সেই সঙ্গে এটি কিডনিও পরিষ্কার করে। এছাড়া কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকিও কমে যায়।


■ কিডনির যত্ন কর ঘরে বসেই ।
আমরা নিজেরা সুস্থ দাবী করি ততক্ষণ, যতক্ষণ আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য না হই। তার মানে কি আমাদের শরীরে কোন সমস্যা নেই? আসলেই কি তাই? আজকাল চারপাশে এত স্বাস্থ্যসমস্যা মধ্যে কিডনি নিয়ে ভুগছে কত শত, হাজার মানুষ তা বেশিরভাগই অজানা। অথচ সহজ কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে কিডনিটা ভালো রাখা যায় খুব।
【1】 শরীরে ফ্লুয়িড ব্যালেন্স ঠিক রাখা |
কিডনি ভালো রাখতে শরীরের ফ্লুয়িড ব্যালেন্স ঠিক রাখা জরুরি। নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে কিডনি আরও বেশি কার্যকর হবে। বেশি বেশি পানি খেলে প্রস্রাব থাকবে স্বচ্ছ আর হালকা, আর যদি দেখেন তা হলদেটে বা আরো গাঢ় রং-এর তাহলে বুঝবেন, পানি খাওয়াটা কম হচ্ছে।  নিয়মিত প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি খাওয়া আপনার কিডনির জন্য খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে।
【2】 খাবারে থাকুক ভারসাম্য |
শরীরের জন্য খাবার যে দরকার তা তো সবার জানা। তবে শরীরের জন্য খাবারের সঠিক ভারসাম্য রাখা চাই। প্রতিদিনের তালিকাভুক্ত খাবারে যেন মিনারেল এবং ভিটামিনের উপস্থিতি থাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি শাক-সবজি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। আর আমাদের দেশে প্রায় সারাবছরই মৌসুমি ফল পাওয়া যায়, আর গ্রীষ্মে তো রীতিমত ফল উৎসবই থাকে। তাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খেতে হবে বিভিন্ন রকমের ফল। আর এসব খাবার নিয়মিত খেলে তা কিডনিকে ভালো এবং অ্যাকটিভ রাখতে সাহায্য করবে। তবে সেই সাথে অবশ্যই অতিরিক্ত লবণ ও স্নেহ বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
【3】 গরমে কিডনির বিশেষ যত্ন |
গ্রীষ্মকাল প্রায় এসেই গেছে। আর এই সময়ে বাইরে কাঠফাটা রোদ আর গনগনে গরম কতখানি তা টের পাওয়া যায় বাইরে কাজে বের হলে, বেড়াতে গেলে, খেলাধুলা কিংবা ব্যায়াম করতে গেলে। অসহ্য এই গরমে অল্পতেই ঘেমে যাওয়া, ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় অনেকখানি। দেখা দিতে পারে নানা অসুখ-বিসুখ, বাজে প্রভাব পড়তে পারে কিডনির উপরও। তাই গরমের সময় কিডনিকে ভালো রাখতে খেতে হবে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি পানি।
【4】 ওজন রাখুন নাগালের মধ্যেই ।
খাবার ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না এটা ঠিক। তবে অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর এই ওজন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় যা কিনা কিডনি রোগের অন্যতম মূল কারণ। কারণ রক্ত চাপ যদি খুব বেড়ে যায় তবে তা কিডনির জন্য বড় ধরণের হুমকি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে রক্তে বেড়ে যাওয়া সুগারও একইভাবে কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই অতিমাত্রায় খেয়ে মুটিয়ে যাওয়া নয় বরং পরিমিত খাবার খেয়ে নিজের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। যা আপনাকে রাখবে অ্যাকটিভ আর রক্ত চাপ রাখবে নিয়ন্ত্রণে আর ডায়াবেটিস কে রাখবে দূরে। ফলে কিডনি থাকবে ভালো এবং ঝুঁকিমুক্ত।
【5】 টুকিটাকি ওয়ার্কআউট চলতে থাকুক   ।
সারাদিন অফিস, ক্লাস কিংবা কাজের মাঝে ব্যাস্ত থাকি। কখনও টানা এক জায়গাতেই বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এতে শরীরে এক ধরণের অলসতা, অসাড়তা চলে আসে। আর দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে শরীরের জন্যও তা খারাপ কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১.৩০ ঘণ্টা টুকিটাকি ওয়ার্কআউট করা উচিত। যেমন একটু হাঁটাহাঁটি, কিংবা জগিং, কিংবা বন্ধুদের সাথে সাইক্লিং করা, আর সুযোগ থাকলে সাঁতারের চেষ্টা করা। সপ্তাহে মাত্র ১.৩০ ঘণ্টা, দিনে ২০-২২ মিনিট ওয়ার্কআউট কি খুব বেশি? অথচ প্রতিদিনের একটুখানি এই ওয়ার্কআউট আপনাকে রাখবে অ্যাকটিভ ও ফিট। যা কিডনিকে ভালো রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।


■ শেষমেশ ।
কিডনি ইলেকট্রোলাইটস এবং অন্যান্য তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে। এমনই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গকে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক কিডনির জন্য উপকারী খাদ্যাভ্যাসও জরুরি। এখানে রইল এমন সব খাদ্যের তালিকা যেগুলো কিডনির সুরক্ষায় নিয়মিত খেতে হবে।


THANK YOU ALL
A N I

No comments

Powered by Blogger.