রজনীগন্ধা ফুলের চাষ এবং পরিচর্যা

THE AGRICULTURE INFORMATION | কৃষি তথ্য | TUBEROSE FLOWER | রজনীগন্ধা ফুল |



A N I |
19 | SEPTEMBER | 2019 |
THE AGRICULTURE INFORMATION | কৃষি তথ্য |
TUBEROSE FLOWER | রজনীগন্ধা ফুল |

■ রজনীগন্ধা ফুলের পরিচিতি 
এর ইংরেজী নাম TUBEROSE এবং বৈজ্ঞানিক নাম POLIANTHES TUBEROSA. এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকো। ফুলদানীতে এ ফুল 7-10 দিন সজীব থাকে এবং প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে।বাংলাদেশে এ ফুলের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ট চাষাবাদ হচ্ছে।

সুগন্ধি ফুল হিসেবে রজনীগন্ধা খুবই জনপ্রিয়। এ ফুল সন্ধ্যারাতে ফোঁটে এবং সুগন্ধ ছড়ায় বলে এর রজনীগন্ধা নামকরন হয়েছে। চাহিদার দিক দিয়ে এবং বানিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে এ ফুলের জুড়ি নেই।  কাটফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানীর জন্য এটি অনন্য। এ ছাড়া মালা, পুষ্পস্তবক, বেনী ও মুকুট তৈরীতে এ ফুল ব্যবহৃত হয়। এ ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।

■ রজনীগন্ধা ফুলের জাত
ফুলের  আকার ও পাঁপড়ির উপর ভিত্তি করে তিন শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়। যথাক্রমে,
【1】 সিংগেল : এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে। ফুল সম্পূর্ন সাদা রং এর হয় এবং ফুল গুলি খুবই সুগন্ধযুক্ত হয়।
【2】 সেমি-ডাবল: এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি দুই/তিন সারিতে সাজানো থাকে ।
【3】 ডাবল : এ ধরনের জাতের ফুলে তিন-এর অধিক পাপঁড়ির সারি থাকে । পাঁপড়ির কিনারায় হালকা লাল রং এর আভা থাকে এবং ফুল গুলি কম সুগন্ধযুক্ত হয়।
বাংলাদেশে সিংগেল ও ডাবল শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোন জাত উদ্ভাবিত হয়নি।

রজনীগন্ধা ফুল
রজনীগন্ধা ফুল ।
A N I .


■ রজনীগন্ধা ফুলের বংশবিস্তার 
রজনীগন্ধা বীজ ও কন্দ উভয় মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত কন্দ দ্বারাই রজনীগন্ধার চাষ হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মত যে বাল্ব পাওয়া যায় তাকে কন্দ বা বাল্ব বলে। পুরাতন গাছের গোড়ায় ঝাড় আকারে অনেক বাল্ব থাকে। মাঝের  বাল্বটি বড় হয়। সাধারনত: মাঝারী থেকে বড় আকারের বাল্ব বংশবিস্তারের জন্য ব্যবহার করা হয়। বড় ধরনের বাল্ব থেকে স্বাস্থ্যবান গাছ হয় ও গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে কিন্তু ছোট বাল্ব থেকে দূর্বল প্রকৃতির গাছ হয় ও দেরীতে ফুল আসে। কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছে মা-গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে এবং স্বল্প সময়ে গাছে ফুল আসে। শীতকালে কন্দগুলি সাধারণত মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শীতের শেষে কন্দগুলি লাগানোর জন্য উপযোগী হয়।

■ উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি 
রজনীগন্ধা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে এজন্য আমাদের দেশে গ্রীষ্ম কালে এ ফুলের চাষ করা হয়। এ ফুলের সফল চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা 20-300 সেন্টিগ্রেড ও আর্দ্র আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। সুনিস্কাশিত, জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি রজনীগন্ধা চাষের জন্য উত্তম।

■ জমি তৈরী ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি 4-5 বার চাষ দিয়ে ভালভাবে তৈরী করতে হয়। শেষ বার চাষের সময় হেক্টর প্রতি উর্বরতা ভেদে 5-10 টন গোবর, 250 কেজি ফসফেট ও 200 কেজি  এম পি সার মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দেয়া উচিত। বাল্ব রোপনের 3 সপ্তাহ পর যখন নতুন গাছের বৃদ্ধি শুরু হয় তখন হেক্টর প্রতি 300 কেজি ইউরিয়া সার এর অর্ধেকটা প্রথম উপরি প্রয়োগ এবং বাকী অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত। ভালো মানের ফুলের জন্য হেক্টর প্রতি 12 কেজি বরিক এসিড এবং 8 কেজি জিন্ক সালফেট প্রয়োগ করা যেতে পারে।

■ রজনীগন্ধা ফুলের বাল্ব রোপন 
বাঁছাইকৃত বাল্বগুলি মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে লাগানো উচিত। লাগানোর সময় পুরানো শিকড়গুলি কেটে দিতে হয়। সাধারনভাবে ভাল ফুল পাওয়ার জন্য লাইন থেকে  লাইনের দূরত্ব 30 সে: মি: এবং প্রতি লাইনে বাল্ব থেকে বাল্বের দূরত্ব 20 সে: মি: নির্ধারণ করা যেতে পারে। কন্দগুলি এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে এর অগ্রভাগ ঠিক মাটির নিচে সমতলে অবস্থান করে।প্রতিটি বাল্ব  1.5-3.0 সে মি.) সোজা করে 7-10 সে:মি: মাটির গভীরে লাগানো উচিত। মাটিতে রসের অভাব থাকলে কন্দ লাগানোর পূর্বে সেচ প্রদান করা উচিত। এছাড়া কন্দ রোপণের পর মাটিতে কন্দ বসার জন্য হালকা সেচ দেওয়া ভাল।

■ অন্তর্বর্তী পরিচর্যা এবং যত্ন
রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। শুকনো মৌসুমে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি সুনিস্কাশনের জন্য নিস্কাশন নালা তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়া  থেকে শুকনো বা মরা পাতা সরিয়ে ফেলা উচিত। শীতকালে গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ন ভাবে কেটে দেয়া ভাল।এফিড, থ্রিপস পোকা দমনের জন্য 2 মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে 7-10 দিন অন্তর স্প্রে করা ভাল।


■ ফুল কাটা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি
রজনীগন্ধার একই ক্ষেত থেকে পরপর 3 বছর ফুল উৎপাদন করা যায়। রজনীগন্ধা লম্বা ডাটার মাথায় মঞ্জরী আকারে হয়। রজনীগন্ধার পুষ্পদন্ডের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হয়। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হয়। ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে মাটি থেকে 4-6 সেমি উপরে ফুলের ডাঁটি কাটতে হয় যাতে গোড়ার বাড়ন্ত কুঁড়ির ক্ষতি না হয়। প্রস্বেদনের কারণে জলীয় ক্ষতি (TRANSPIRATION LOSS) এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি অপ্রয়োজনীয় পাতা অপসারণ করে সুবিধামত বান্ডিল তৈরি করে প্রথমে বালতিতে চিনি সহ পানিতে 2 ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরে ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে জড়িয়ে দূরবর্তী বাজারে প্রেরণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ফূলের জীবনকাল (VASE LIFE) দীর্ঘায়িত হয়।

■ বাল্ব বা কন্দ উত্তোলন ও সংরক্ষণ 
ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছের বৃদিধ বন্ধ হয়ে গেলে কন্দগুলি মাটি থেকে তুলে এনে পরিস্কার করে ছায়াযুক্ত শুষ্ক মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হয়। প্রয়োজনমত পরিপক্ক কন্দ বাছাই করে পরবর্তীতে বংশবিস্তারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। রজনীগন্ধার কন্দ বেশ কষ্টসহিষ্ণু এবং সাধারণ অবস্থায় এর কন্দ সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।


রজনীগন্ধা ফুল
রজনীগন্ধা ফুল
A N I .


■ রজনীগন্ধা ফুলের ফলন 
রজনীগন্ধার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষতঃ বিদেশে এর রপ্তানি বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। দেখা গেছে যে, প্রতি হেক্টরে প্রায় 1 লক্ষ কন্দ লাগিয়ে 3.5 লক্ষ ফুলের ডাঁটি পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি ডাঁটির খুচরা মূল্য 2-4 টাকা। তবে ঋতু বিশেষে এর মূল্য বেশ পরিবর্তনশীল। তথাপি এ ফসল উত্তরোত্তর একটি লাভজনক ফসল হিসেবে আমাদের দেশে স্থান করে নিয়েছে। এ কারণে এর চাষ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

THANK YOU ALL.
A N I .

No comments

Powered by Blogger.